এপার বাংলা ওপার বাংলার ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলায় হাজারও মানুষ

Loading

মোঃ রাসেল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি: স¤প্রীতির বন্ধন, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব সব কিছুতেই ফাগুনের ছোঁয়া। তারপরও বুকের ভিতর মুষড়ে ওঠে এক অজানা কষ্ট। আমার ভাইয়ের রক্তে ভেজা রাজপথ ধরে যখন ছোট্ট শিশুটি এক তোড়া ফুল হাতে শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায় তখন মাথার ওপর উড়তে থাকা পাখিটাও আনমনে গেয়ে উঠে- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে বেনাপোলে ভারত-বাংলাদেশ নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় দু‘বাংলার মানুষ মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে দু‘বাংলার আমন্ত্রিত মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তারা, কবি, সাহিত্যিক, লেখক এবং দু‘বাংলার ভাষাপ্রেমী মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছে। দু‘বাংলার মানুষের এ মিলন উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে দু‘বাংলার একুশ উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে উভয় চেকপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। অনুষ্ঠানকে সার্থক করতে দু‘দেশের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকদফা বৈঠকও করা হয়েছে দুই সীমান্তে। বেনাপোল-ভারত সীমান্তে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে দুদেশেই নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী শহীদ বেদি। উভয়দেশের নেতৃবৃন্দ সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করে। এরপর উভয় দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। উভয় দেশের চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের সামনে তৈরি করা হয়েছে সুসজ্জিত ২১ মঞ্চ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন যশোর-১শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী, অতিরিক্ত কমিশনার ড. নিয়ামুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন,বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্তপরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল, শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল, নাভারন সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আসিফ-উদ-দৌলাহ্ সরদার, জেলা পরিষদ সদস্য ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান। বেনাপোল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নুরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন পরিষদের আহŸায়ক শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু।

অপরদিকে ভারতের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন প্রধান অতিথি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বিশেষ অতিথি থাকবেন বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শঙ্কর আঢ্য, উওর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ, দমদম পৌরসভার সিআইসি রিঙ্কু দে দত্ত।এ ছাড়াও একুশের কবিতা আবৃতি, ছড়া, গীতিনাট্য, আলোচনা আর সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সাত গুণীকে মৈত্রী পদক প্রদান করেছে দুই দেশের অতিথিরা। পদক পেলেন কালের কণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি ফখরে আলম, পশ্চিমবঙ্গের কবি মুক্তি বসু, সমাজসেবক কার্ত্তিক দত্ত, বাংলাদেশের রাজনীতিক আজগর আলী মিঞা, রাজনীতিক মিনহাজ উদ্দিন, শিক্ষাবিদ শান্তিপদ বিশ্বাসও বৃক্ষপ্রেমিক আব্দুল ওয়াহেদ সর্দার।

দু‘বাংলার মানুষের এ মিলন উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি বছরই দুই বাংলার সীমান্তবর্তী এ অংশের বাসিন্দারা এক সাথে মিলিত হয়ে দিবসটি পালন করেন। তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে আবেগাপ্লæত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ যেন ভুলে যায় কিছুসময়ের জন্য। ফুলের মালা দিয়ে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ বাঙালির নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। দুই বাংলার মানুষের মাঝে বসে এক মিলন মেলা।

ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। এ সময় পেট্রাপোল ও বেনাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।২০০২ সাল থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে দু‘বাংলার মানুষ। প্রথম দিক থেকে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়ে আসলেও ২০১৫ সাল থেকে এমপি-মেয়র দ্ব›েদ্বর কারণে এমপিকে বাদ দিয়ে মেয়র একাই অনুষ্ঠান করে আসছিলেন। এবার মেয়রকে বাদ রেখে এ অনুষ্ঠান করছেন এমপি অনুসারীরা। ফলে এ অনুষ্ঠানে মেয়র ও তার অনুসারিরা যাচ্ছেন না। সমগ্র অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে দুই সীমান্তে। বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে দুই সীমান্তে।