নওগাঁর আত্রাইয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে গরুর মাংস দিয়ে রান্না করা খাবার দেওয়া সহ স্থানীয় বণিক সমিতির কাছ থেকে পর্যাপ্ত চাঁদার টাকা না পেয়ে তা ফেরত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে চলছে নানা গুঞ্জন। মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলাবাসীর মধ্যে একধরনের মিশ্র প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতনরা।
জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা, সার ডিলার, সোনার দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে। জাতীয় দিবসের দিনে অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও স্থানীয়দের জন্য গরুর মাংস দিয়ে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। জাতীয় এধরনের অনুষ্ঠানে কেন গরুর মাংস দিয়ে খাবার করা হয়েছে তা নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন। মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলাবাসীর মধ্যে একধরনের মিশ্র প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা বুদ্ধেশর বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরে যা হয়নি তা এবার হয়েছে। এযাবতকাল জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে কখনো গরুর মাংস দেয়া হয়নি। কিন্তু এবার গরু রান্না করা হয়। হিন্দু যারা আছেন তাদের জন্য অবশ্য আলাদা করা হয়েছে। যেখানে ভাতের সাথে মুরগি ও ডিম ছিল। তবে সে খাবারটি গরুর মাংসের পাত্রেই রান্না করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
মুক্তিযোদ্ধা নৃরেন্দ্রনাথ দাস বলেন, একাজ টি করা মোটেও ঠিক হয়নি। আগে বললে তো আমরা প্যাকেট নিতাম না। জাতীয় অনুষ্ঠানে সব ধরনের জাতী থাকবে। আর সেখানে গরুর গোস্ত মোটেও কাম্য নয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধা একসাথে এক খাবার খেতে চেয়েছিলাম সেটা হলো না।
উপজেলার পাচুঁপুর ইউনিয়ন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী রুহুল ইসলাম বলেন, আমাদের মতামতকে ইউএনও স্যার কখনোই প্রাধান্য দেননি। তিনি নিজে যা ইচ্ছে তাই করে চলেছেন। আমরা হিন্দু-মুসলমান মুক্তিযোদ্ধা যারা আছি সবাই একসাথে এক রান্না খাব। কম খরচে আমরা মুরগি খেতে চেয়েছিলাম। প্রতিবছর মুরগি দিয়ে আমরা অনুষ্ঠান করি। কিন্তু সেটা এবার হয়নি। মুসলমান হয়েও অনেকে তো গরু খাইনা। এসব অনুষ্ঠানে গরুর গোস্ত দিয়ে রান্না করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুদ্ধ। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার উপজেলায় ২২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আছি। এর মধ্যে কয়েকজন মারা গেছে। নিহতদের স্ত্রীসহ ২৩০ জনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এবার কোন ধরনের আলোচনা হয়নি। আর এসব কারনে বৃস্পতিবার প্রহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি সভা আমরা বয়কট করেছি।
আত্রাই উপজেলা বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোরশেদ আলম পারভেজ বলেন, প্রতিবছরই জাতীয় অনুষ্ঠানে আমরা কিছুটা সহযোগীতা করে থাকি। এবারও সহযোগীতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। হয়ত ইউএনও স্যারের চাহিদা একটু বেশি ছিল। কিন্তু আমরা তা না বুঝে কম দিয়েছি। আর একারণে আমাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে আমরা চাপের মধ্যে আছি।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: ছানাউল ইসলাম বলেন, সরকারি কোন বরাদ্দ এখনো আসেনি বা পাইনি। আমরা সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠান শেষ করেছি। গরুর মাংস খেয়ে অনেকেই আনন্দিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা রান্না করা হয়েছিল। আমার জানামতে কেউ ব্যাথিত হয়নি। এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগও করেনি। তবে চাঁদার টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননা ।