সাভারের তুরাগ নদীর অস্তিত এখন হুমকির মুখে, চলছে বেপরোয়া দখল, বালি ফেলে ভরাট ও প্লট তৈরীর জন্য ইট বালি দিয়ে পাকা বাউন্ডারী নির্মানের কাজ।
তুরাগ নদীর জলাশয়গুলো ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে পাকা দেয়াল ও নানা ধরনের স্থাপনা।
সাভার ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সংযোগ সড়ক ভাকুর্তা ইউনিয়নের তুরাগ ভাঙ্গা ব্রীজ থেকে মুগড়া কান্দা প্রর্যন্ত সড়কের পাশ দিয়ে তুরাগ নদীর তীর ঘেষে সরকারী খাল অবৈধ্য ভাবে দখল করে ড্রেজার দিয়ে বালি ফেলে ভরাট করা হয়েছে।
এখন চলছে ইট বালি দিয়ে পাকা বাউন্ডারী করে প্লট নির্মানের কাজ।
তৈরী করা হয়েছে পাকা দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা । প্রতিটি স্থাপনার ভিতরে সামনের দিকে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তুরাগ নদীর সরকারী খাল দখল করে গড়ে উঠেছেন জনব ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াক্সসব নামে একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির সামনের দিকে রয়েছে ছোট্ট একটি মসজিদ, পিছনে বিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াক্সসব। মসজিদের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় নুংরা অপরিছন্ন ব্যাবস্থা, ফ্লোরে ছরিয়ে ছিটিয়ে রেয়েছেন, যায়নামাজ, চাটাই, লোহার পাইপ, রড সিমেন্টসহ নির্মানের বিভিন্ন জিনিস পত্র।
দেখে মনে হচ্ছে মসজিদ টি তৈরীর পর থেকে কোনো নামাজ হয়নি।
তুরাগ ব্রীজ পার হয়েই প্রথমে মাটি ফেলে ভরাট করে খালের উপর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মান করা হয়েছে।
এর পর মুগড়া কান্দার দিকে দুই শো’ গজ এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে জনব ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াক্সসব নামে একটি বিশাল ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সামনের দিকে রয়েছেন ছোট্ট একটি মসজিদ।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি নাই তাহলে এই মসজিদে নামাজ পরে কে। এসময় তারা আরো বলেন, আমরা এই মসজিদে কখুনো আযান শুনিনি বা কোনো নামাজের জামায়েত ও অনুষ্ঠিত হতে দেখিনি।
এলাকার প্রভাবশালী ভুমি সদস্যুরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদকে পুজি করে জমি দখল করছে বলে জানান তারা।
এছারাও সরেজমিনে গিয়ে এই মসজিদের ইমাম বা, মোয়াজ্জেম কাউকেই খুজে পাওয়া যায়নি।
কারখানার ভিতরে গিয়ে মোঃ রফিক হোসেন নামে এক জন কেয়ারটেকার কে পাওয়া যায়। এব্যপারে তার কাছে জান্তে চাইলে, সে ক্যামেরার দেখে পালিয়ে যায়।
এর পর একটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকারে তুরাগ নদীর খালটি ড্রেজার দিয়ে বালি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। সড়কের পাশ দিয়ে টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সড়কের সাথে এর ভিতরে যাওয়ার জন্য একটি বিশাল গেইট ও রয়েছে। ভিতরে ইট বালি দিয়ে পাকা বাউন্ডারী নির্মান করে বিভিন্ন আকারে ছোট বড় প্লট তৈরী করা হয়েছে।
এখানেও গিয়ে দেখা যায় ভিতরে গেইটের পাশে ছোট্ট একটি মসজিদ ও রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব মোঃ আসাদ ও মোয়াজ্জেম মোঃ বাদল মিয়াকে পাওয়া যায়।
মসজিদের ইমাম সাহেব মোঃ আসাদ এর কাছে মসজিদের নাম জান্তে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাইতুল আকসে জামে মসজিদ। মোয়াজ্জেম সাহেবের কাছে মসজিদের নাম জান্তে চাইলে তিনি বলেন এই মুহুর্তে মসজিদের নাম আমার মনে নাই।
তুরাগ নদীর খাল দখল করে কারা স্থাপনা গুলি তৈরী করেছে মোয়াজ্জেম বাদল মিয়ার কাছে জান্তে চাইলে তিনি বলেন, আমিন বাজার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন ও মোঃ মাহফুজ সাহেব এটা করেছেন। এসময় মোয়াজ্জেম বাদল মিয়া মোঃ মাহফুজ
সাহেবের একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সাথে কথা বলতে বলেন।
পরে মোঃ মাহফুজ সাহেবের ০১৭১২-০৩২৬৩৫ মুঠোফনে যোগাযোগ করে তুরাগ নদী ভরাটের ব্যপারে জান্তে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে আমার কোনো জমি নাই, ওরা ভুল নাম্বার দিছে আপনাকে আমি নির্বাচনের কাজে আমি ফেনীতে ব্যাস্ত আছি।
সরেজমিনে দখল কৃত জমির বাউন্ডারীর ভিতরে মসজিদের সামনে একটি ত্রুয় সুত্রে মালিকানার সাইন বোর্ড দেখা যায়।
সাইন বোর্ডে লেখা আছে, ত্রæয় সুত্রে এই জমির মালিক, ১/ মোঃ মাহফুজুর রহমান, ২/ শাহ মোস্তফা আলমগীর, ৩/ মোঃ আমিনুল ইসলাম, ৪/ মোঃ আনোয়ার হোসাইন, চেয়ারম্যান আমিন বাজার ইউনিয়ন পরিষদ, ৫/ মাওলানা শফিকুর রহমান, ৬/ মোঃ ইয়াকুব।
এব্যপারে মুগরাকান্দা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, আমরা দেখেছি আমিন বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন তুরাগ নদীর এই সরকারী খাল দখল করে অবৈধ ভাবে বালু ফেলে ভরাট করছে।
প্রথম প্রথম যখন ভরাট করে আমাগো এলাকার অনেক মানুষই এসে বাধা দিছিলো, পরে চেয়ারম্যান কি করলো জানিনা। এখনতো দেখছি ভরাট করেই ফেলেছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের মুগড়াকান্দা এলাকাসহ প্রায় ১০/১২ টি গ্রামের পানি সব এই তুরাগ নদীর খাল দিয়ে নেমে যায়।
সরকারী খাল গুলি এ ভাবে যদি ভরাট হয়ে যায় তাহলে আমাদের এলাকায় তো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
এলাকাবাসিরা জানান, আমিন বাজার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে অবৈধ্য ভাবে তুরাগ নদীর সরকারী খাল দখল করে ড্রেজার দিয়ে বালি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন আকারে ছোট বড় প্লট ।
ওই এলাকার স্থানীয় আরেক জন বাসিন্দার মোঃ মোকলেছ মিয়া বলেন, আমিন বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা প্রথমে দেখছি ট্রাক দিয়ে বালি ফেলাতে পরে, দেখছি ড্রেজার দিয়ে ভরাট করতে।
তুরাগ নদীতে আমাদের এলাকার কিছু গরীব মানুষ মাছ ধরে সংসার চালায়, তাছারাও আমাদের মুগড়াকান্দা বিলের পানি নামে এই খাল দিয়ে, এখানের বেশির ভাগই খাস জাইগা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যপারে ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন বলেন,
আমাদের ভাকুর্তা ইউনিয়নে ৭নং ওয়ার্ডের তুরাগ লোহার ব্রীজ থেকে মোগড়াকান্দা প্রর্যন্ত রাস্তার পাশ দিয়ে অনেক সরকারী খাস জমি আছে, তো এই খাস জাইগা গুলি কারা কি ভাবে ভরাট করছে এই ব্যপারে আমি কিছু জানিনা। হয়তো ওরা প্রভাবশালী ভুমিদস্যু তাই কেউ কিছু বলেনা।
এই খাস জমি গুলি যারা ভরাট করছে এ ব্যপারে সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন এটা বন্ধ করা হোক তা না হলে ভবিস্যতে আমাদের এলাকার পানি নেমে যাওয়ার আর কোনো ব্যবস্থা থাকবেনা।
এলাকা বাসিরা আরো বলেন, ভুমি দস্যুরা কৌশলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে পুজি করে তুরাগ নদীর সরকারী খাল দখল করে প্রতিটি স্থাপনার সামনের দিকে ছোট্ট একটি মসজিদ বানিয়েছে। এর পেছনের দিকে বিশাল আকারে জমি দখল করছে। যাতে করে যে কোনো ঝামেলা বা, উচ্ছেদ অভিযান এলে মসজিদ বাচানোর ছলে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা যায়।
এ ব্যপারে আমিন বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন এর মুঠোফনে ০১৮৩১-৫৫৮৫৮৫ যোগাযোগ করলে তার কাছে তুরাগ নদীর খাল ভরাটের বিষয়ে জান্তে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওরা একটা সমিতি করছিলো কিছু জাইগা কিনে বালি দিয়ে ভরাট করছে, আমারে রাখছিলো এক এক জনের টাকা ধরছিলো দশ লাখ কইরা।
আমি আর টাকা পয়সা দিতে পারিনি, আগে কিছু টাকা দিছিলাম পরে আর দিতে পারিনি। তাছারা এ ব্যপারে আমারও ওখানের কাজ কাম সুবিধা জনক মনে হচ্ছেনা।
আমাদের পিছনে মেঘনা গ্রæফ জাইগা কিনেছে পরে চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম বেশি দুর আগানো যাবেনা। পরে আমি আর টাকা পয়সা দিতে পারি নাই এই জন্য আমি আর ওই দিকে যাই না।
এসময় তিনি আরো বলেন, সরকারী খাল খননের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে, সরকারী খাল ভরাটের জন্য না। সুতরং খাল ভরাটের কোনো কাজের পক্ষে আমি নাই। আমার ইউনিয়নে সরকারী খাল খননের ব্যপারে মাসিক সভায় মিটিং এ ইউএনও আমাকে বলছিলো খাল খননের দিন থাকতে, কিন্ত আমি বলেছিলাম যামুনা কারন খাল কাটতে যামু মানুষ মনে করবে কত টাকা যেনো কামাইতাছে, আমি গরিব মানুষ ডাল ভাত পছন্দ করি।
তো খাল যদি ভরাট করে থাকে তাহলে সেকেন্টের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে, আমি এখনি ফোন দিয়ে জিগাইতাছি । তিনি আরো বলেন, আমি পরে আর টাকা পয়সা দিতে পারিনিত তাই ওই খানে আর লজ্জায় যাইনা, আমি এখনই ওগোরে ফোন দিয়ে জিগাইতাছি ওরা কোন জাইগা ভরাট করতাছে এখনই বন্ধ করে দিচ্ছি।
যদি ওরা সরকারী খাল ভরাট করে তাহলে কাজ বন্ধ, সত্য কথা বলতে কি আমি প্রথমে কিছু টাকা দিয়ে ছিলাম, পরে আর টাকা পয়সা দিতে পারিনি এই জন্যই ওই দিকে আর যাইনা। এই কাজে আমি আর থাকতে পারুম না মনে হয়।
খাল তো ওরা ভরবার পারবইনা সরকারী নিষেধ আছে। তুরাগ নদীর সরকারী খাল ভরাটের ব্যপারে তিনি আরো বলেন, এটা একদম অন্যায় সরকারী নিষেধ আছে খাল ভরাট করা যাবেনা।
এই নিউজের স্থানীয়দের বক্তব্য, মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেম এর বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড আছে এবং আমিন বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেনের কল রেকর্ড আছে।