ধূপের হালকা ধোঁয়া থেকে অবয়বটা হঠাৎ স্পষ্ট হয়ে আসে। তাহমিনা খান। কাছের মানুষদের কাছে তিনি শৈলী নামেই পরিচিত। দেখা দিলেন যেন ঠিক নিজের ক্যারিয়ারের মতো। এরপর শৈলীর বারান্দায় বসে সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায় জানা গেল তাঁর স্পষ্ট হয়ে ওঠার গল্প।
অবশ্য স্পষ্ট তিনি প্রথম থেকেই ছিলেন, যখন থেকে ‘শৈলী’ শুরু করেছেন। শৈলী মানে তাঁর গয়নার স্টুডিও। তিনি বলেন ‘শৈলী ক্রিয়েটিভ স্টুডিও।’ অবশ্য শুধু গয়না নয়, মায়ের তৈরি আচার আর নিজের নকশার শাড়িও রেখেছেন শৈলীতে। আরও আছে ছোটদের মজার সব বই। পাওয়া যাবে রূপচর্চার কিছু ভেষজ পণ্য। এ উদ্যোগের শুরু অনলাইনে। নির্দিষ্ট করে বললে ফেসবুকে।
স্কুলে পড়ার সময় কিশোর বয়সে ঘরে বসে বানালেন একটা পুঁতির গয়না। যখন সবার প্রশংসার বন্যায় ভেসে গেলেন, ভালোবেসে ফেললেন নিজের এই গুণটাকে। এরপর দাদির জন্য একটা শাড়িতে সুই-সুতার কাজ করে তাক লাগিয়ে দিলেন। পরে সাংবাদিক আর কথাবন্ধু হয়ে কাজ করলেও মন পড়ে ছিল গয়না নকশা করার জন্য। যেই ভাবা সেই কাজ। চাকরিচুকরি ছেড়ে দিয়ে লেগে গেলেন স্বপ্নপূরণে।
২০০৬ সাল। তখন ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব কম, বিশেষ করে বাংলাদেশে। আর অনলাইন ব্যবসার কথা কয়জনই-বা ভেবেছেন তখন? তাহমিনা খান ভেবেছিলেন। শখের ভালোবাসাটাকে পুঁজি করে উপার্জনের উপায় বের করলেন। গয়না বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করা শুরু করলেন। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের গয়নার প্রতি খুব ঝোঁক তাঁর। তাই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে তাদের সঙ্গে মিশে তাদের গয়না সম্পর্কে জেনেছেন, শিখেছেন। এরপর নিজের নকশায় গড়তে শুরু করেছেন ওই সব গয়নাও। মাটি, পুঁতির পরে ধীরে ধীরে যোগ করেছেন সোনা ও রুপার গয়না।
জের ডিজাইন স্টুডিওতে তাহমিনা খান, এ উদ্যোগের শুরু হয়েছিল অনলাইনে। ছবি: খালেদ সরকার ২০০৯ সালে অনলাইনের পাশাপাশি প্রথমবার শৈলীর স্টুডিও উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এখন তাঁর মোট পাঁচটি স্টুডিও আছে। সম্প্রতি লালমাটিয়ায় খুলেছেন সর্বশেষটি।
তাহমিনা খানের স্টুডিওগুলোতে কাজ করছেন মোট ৩৭ জন কর্মী। বেশির ভাগই নারী। কেন? তাহমিনা খান নিজেকে সব সময় মানুষ ভেবেছেন, নারী নয়। কিন্তু উপলব্ধি করেছেন, নারীরা পিছিয়ে আছেন। তাই নিজের ভিত শক্ত করে সুযোগ করে দিচ্ছেন আরও নারীদের।
নারীরা উদ্যোক্তা হতে গেলে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হন। এ কথা মেনে নিলেও তাহমিনা খান বলেন, ‘সমস্যাকে সমস্যা মনে করা যাবে না। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে যত বেশি পড়বে, তত বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে বলে মনে করি।’ ফেসবুক পেজ দিয়ে ছোট ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করা বেশ কার্যকর বলে মনে করেন তাহমিনা খান। তিনি বলেন, ফেসবুকে বন্ধুদের মাধ্যমে পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তবে পণ্যের মান আর সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো আপস করা যাবে না।
তাহমিনা মনে করেন, দেশ যখন একজন মানুষের কাজের স্বীকৃতি দেয়, তখন উৎসাহ আরও বেড়ে যায়।