ধামরাইয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ, থানায় মামলা আটক ১ ।
মোঃ সম্রাট আলাউদ্দিন( ধামরাই প্রতিনিধি) : ধামরাইয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের ফলে ওই স্কুলছাত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে ধর্ষক ও সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা (ধামরাই থানায় মামলা নং ৩৯)।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ধামরাইয়ের নিকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাদের প্রতিবেশি চৌহাট ইউনিয়নের মুন্সীচর গ্রামের মোকছেদ আলীর (৫৫) বাড়িতে টেলিভিশন দেখতে যেতো। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মোকছেদ আলী ভয়-ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করতো তাকে। এভাবে হুমকির মুখে একাধিকবার ধর্ষণ করায় স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এদিকে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা নির্যাতিতা শিশু ও তার পিতাকে একটি বাড়িতে জিম্মি করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ধর্ষককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। আরও জানা যায়, তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা জরিমানার ৬০ হাজার টাকা পকেটে ভরে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় মাতব্বরা।
বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পেরে ধামরাই থানা পুলিশ ধর্ষক ও বিচার করা মাতব্বরদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় পুলিশের ভয়ে তারা পালিয়ে গেলেও ধর্ষকের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। আর ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এব্যাপারে শিশুটির পিতা জানান, তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে চাঁন মিয়া, ফারুক মেম্বার, আল আমীন, অলক রায়, আবু বকরসহ কয়েকজন। তবে তিনি বিষয়টি মেনে নিতে না পারায় তার সমাজের মাতব্বর রজ্জব বেপারী, মরণ বেপারী ও সোনা মিয়াকে জানান।
এ প্রসঙ্গে মাতব্বর মরন বেপারী জানান, তার কাছে শিশুটির পিতা বিষয়টি জানিয়েছে।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন নির্যাতিতার পিতার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চাঁন মিয়ার বাড়িতে মীমাংসা করা হয়েছে। জরিমানার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন ধর্ষণের শিকার শিশুটির পিতা। ধর্ষকের ভাই দরবার আলী ৬০ হাজার টাকা চাঁন মিয়ার কাছে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সালিশে উপস্থিত বালিয়াটি ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আল আমীন জানান, জরিমানার ৬০ হাজার টাকা মাতব্বররা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্যাতিতার পরিবারকে দেয়ার কথা।
এ ব্যাপারে সালিশের প্রধান মাতব্বর চাঁন মিয়া বলেন, ধর্ষককে ১ লাখ ৮০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার সমুদয় টাকা না দেয়ায় এখনো মীমাংসা হয়নি। তবে জরিমানার ৬০ হাজার টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, সালিশে উপস্থিত অলক রায় ও আবু বক্কর সিদ্দিককে ২০ টাকা দিয়ে শিশুর পিতার স্বাক্ষর করা ষ্ট্যাম্প আনা হয়েছে।
পুলিশের মিডিয়া সেল এর তথ্য প্রদানকারী পুলিশ কর্মকর্তা শামিম মুঠোফোনে ধর্ষণের ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রী দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা উল্লেখ করেন এবং ধর্ষণে সহযোগিতার অপরাধে ধর্ষকের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান।