মাগুরার শ্রীপুরে স্বামীর যৌতুক ও নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূর আত্মহত্যা ।
আশরাফ হোসেন পল্টু,মাগুরা, প্রতিনিধি ঃ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সোনাতুন্দি গ্রামে যৌতুকের দাবিতে স্বামীর শারীরীক নির্যাতনে জেসমিন নাহার (২০) নামের এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করতে নিহতের পরিবারকে ও পুলিশের মুখকে বন্ধ করতে টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত গৃহবধূর খালা ফরিদা পারভীন জানান, মাগুরার জেলা সদরের বাঁশতৈল গ্রামের আব্দুল আজিজ বিশ্বাস এর কন্যা জেসমিন নাহার (২০) কে গত মার্চ মাসে শ্রীপুর উপজেলার সোনাতুন্দি গ্রামের আবু কালাম মোল্যার পুত্র আবু শাহজাহান রেন্টু মোল্যা (৩০) এর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় । বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়ার কোন কথা না থাকলেও বিয়ের পর থেকে যৌতুক লোভী স্বামী রেন্টু মোল্যা প্রায় মুহুর্তে বিভিন্ন অজুহাতে যৌতুকের দাবিতে মারধর করত। গত তিন মাস পূর্বে ভারী গহনার দাবিতে স্বামী রেন্টু তার স্ত্রী জেমমিনকে বেধড়ক মারপিট করে হাত ভেঙ্গে পিতার বাড়িতে জোর পূর্বক পাঠিয়ে দেয় । কন্যার সুখের আশায় পিতা নিরুপায় হয়ে অবশেষে চাষের জমি বিক্রি করে প্রায় এক লাখ টাকার স্বর্ণের গহনা তৈরী করে কন্যাকে জামাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ।
এতেও যৌতুক লোভী জামাই খুশী হতে পারেনি বরং যৌতুকের চাহিদা তার দিনদিন বৃদ্ধি পেতেই থাকে । অতিসম্প্রতি ব্যবসায়িক কাজের অজুহাতে গৃহবধূ জেসমিনকে পিতার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতো পরিমান টাকা সে তার পিতার নিকট থেকে আনতে অপারগতা প্রকাশ করলে যৌতুক লোভী স্বামী রেন্টু বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং জেসমিনের ওপর চালাতে থাকে নির্মম,নিষ্টুর নির্যাতন। গত রবিবার রাত ও সোমবার সারাদিন ব্যাপি গৃহবধূকে বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায় । নির্যাতনের একপর্যায়ে স্বামীর নির্যাতন সহতে না পেরে সে ঔইরাতেই সবার অজান্তে ঘরের আড়ার সাথে রশি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
এদিকে রেন্টুর পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দিনব্যাপি চলে যৌতুক ও নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এবং ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের দেনদরবার। অবশেষে স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন মোল্যা, শ্রীপুর থানার এস,আই জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইউপি সদস্যসহ নিহত গৃহবধূ জেসমিনের পিতা আব্দুল আজিজ বিশ্বাসকে নিয়ে বসে সালিশ বৈঠক। সালিশ বৈঠকে নিহতের পরিবারকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করে বিষয়টির মিমাংসা হয়। মিমাংশার পর জেসমিনের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিতার বাড়িতে দাফন করা হয় ।
শ্রীপুর থানার এস,আই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিহতের পরিবারে কোন আপত্তি না থাকায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সালিশে বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত মোতাবেক লাশের ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করা হয়েছে । তবে অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন মোল্যা জানান,বিয়ের সময়ের প্রদত্ত স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য খরচ বাবদ কিছু টাকা জেসমিনের পরিবারকে দেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাহাবুবুর রহমান জানান, এবিষয়ে পুলিশের অর্থ গ্রহনের কোন তথ্য তার জানা নেই।
পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, জেসমিনের মা-বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং কোন দাবি-দাবা না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।