আয়নাল চেয়ারম্যানের মাদক ও সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে জিম্মি গ্রামের সাধারণ মানুষ

Loading

নিজস্ব প্রতিবেদক : পশ্চিম কেরানীগঞ্জের একটি ইউনিয়ন হযরতপুর। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আয়নাল নানা ধরনের অপোকর্মে লিপ্ত রয়েছেন বলে এলাকাবাসির অভিযোগ। তাদের ভাষ্য এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেন না।

এলাকার উন্নয়ন এবং জন সেবার জন্যই তাদের মানুষ ভোট দেন। কিন্তু ভোটের চিত্র বদলে যাওয়ার পর থেকে এরকম জনদুশমন চেয়ারম্যানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ।

যার বড় উদাহরণ হচ্ছেন এই আয়নাল চেয়ারম্যান। জোর-জবরদস্তি রাস্তা নির্মান, চোরাই গরুর ব্যবসা, ডিভোর্স বা সংসার ভাঙার ব্যবসা, মদক ব্যবসা, নারী কেলেংকারি, ভিন্নমতালম্বি দেখিয়ে মিথ্যা ও হয়রানিমুলক মামলা, কারসাজি করে জমির দখল নেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান আয়নালের বিরুদ্ধে।

সাধারণ একটি পরিবার থেকে উঠে এসে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আয়নাল এখন ডনে পরিণত হয়েছেন।। আয়নাল হকের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেই সাহস পায়না। প্রকাশে কেউ কিছু বললে, হত্যার হুমকি, মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। এরকম অসংখ্য ঘটনার পর ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় আছেন কবে তার ইউপি চেয়ারম্যান পদ বাতিল হবে। মানুষ তার অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবেন।

আয়নাল হকের নির্যাতনের অস্ত্র হচ্ছে মাদক !

তাবা,আয়নালের ছেলে ইমনের ইয়াবা ব্যবসার ম্যানেজার মাদক দিয়ে তুঘলকি কান্ডকারখানা করে চলেছেন হযরতপুরের বহুল আলোচিত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আয়নাল। তার ছেলে এবং ভাগ্নের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসার অভিযোগ। আর তিনি নিজে মাদক দিয়ে শায়েস্তা করে চলেছেন আওয়ামী লীগের নিরীহ নেতাকর্মীদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আয়নাল হক যাকেই তার বিরুদ্ধপক্ষ মনে করেন তাকেই মাদকের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। আর এই কাজে বেআইনি ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে সে ।

এই প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখেছেন কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি বিলাসবহুল বাড়ীর সঙ্গেই বসবাস করা একজন দিনমজুরকে হিরোইনের মিথ্যা মামলায় কিভাবে ফাঁসানো হয়েছে। অথচ ওই ভিকটিম এতটাই গরিব যে তার পক্ষে হিরোইনের ব্যবসা করা অসম্ভব। এমনকি ভিকটিম কোনোদিন বিড়ি সিগারেট খান নি বা ছুঁয়ে দেখেছেন এমনটি এলাকার কেউ বলতে পারবেননা।

এ প্রতিবেদক মো: খালেক এবং লাবু মিয়া নামের দুই ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে হিরোইন ব্যবসার অভিযোগ এনে মামলা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু এরা বলছেন ভিন্ন কথা। লাবু মিয়া স্থানীয় একজন বিএনপি সমর্থকের সঙ্গে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন । সেই কারনে তাকে বিএনপি সমর্থক হিসেবে পুলিশের কাছে তুলে দেন ।

লাবু, নিরীহ গ্রামবাসী। এই সাধারণ ব্যক্তিকে ফাঁসানো হয়েছে হিরোইনের মামলায় ।

একই সময়ে খালেককেও তার ভাইয়ের দোকানে বসা অবস্থায় হাত ধরে উঠিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেন আয়নাল চেয়ারম্যান। স্থানীয় হযরতপুর বাজারে আসার পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা সাজান। রাস্তায় পাওয়া যে দুজনকে এই মামলায় সাক্ষী রেখেছে পুলিশ তার একজনের বয়স তখন ১৮ বছর ছিলনা। লাবু এবং খালেক এই দুজনের বিরুদ্ধেই বিএনপি করার অভিযোগ তোলেন আয়নাল চেয়ারম্যান। অথচ তারা সবাই পরিবারগতভাবেই আওয়ামী লীগ করে চলেছেন। খালেক মনে করেন পুরোনো শত্রুতার কারণে চেয়ারম্যান তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন। অথচ পুরোনো কি শত্রুতা তা সে এখনো জানেনা। এটা এক ধরনের অত্যাচার বা নির্যাতন বসে সে মনে করে। চেয়ারম্যানসহ এই ভিকটিমদের বাড়ী ইটাভাড়া বাজারে একই সীমানায় পাশাপাশি অবস্থানে।

এদিকে আনোয়ার হোসেন রতন গাজী অন্য একজন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধেও প্রতিশোধ মূলক মামলা করিয়েছেন আয়নাল হক। প্রবাসী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাভার থানায় বিএনপির আমলে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার কেনো তার সমর্থকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে তা কারোরই বোধগম্য নয়। রতন গাজী সরাসরি এই মামলা করার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আয়নাল চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধেও মাদক মামলার একটা ষড়যন্ত্র চলছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মো: খালেক ধূমপান করেননি জীবনে। অথচ মাদক মামলায় জেল হাজত খেটেছেন।

সবগুলো মামলা রাস্ট্রবাদি হওয়ার কারণে মূলত আয়নাল চেয়ারম্যান আইনগতভাবে জড়িত নয়। তবে স্থানীয়দের প্রকাশ্য অভিমত যে চেয়ারম্যান আয়নালের চক্রান্তেই এই মিথ্যা মামলাগুলো করেছে পুলিশ। পুলিশকে অন্যায় ভাবে ব্যবহারেরও অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো হযরতপুর ইউনিয়নে মাদক ব্যবসার বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তার ছোট ছেলে ইমন। ইমনের প্রধান সহযোগি তাবা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর প্রথমেই বলেছে সে চেয়ারম্যানের ছেলে ইমনের ব্যবসা সামলায়। ওই সময় সে মামুন, আলামীন, সোহেল তাজুর নাম বলেছিল। এছাড়া হাইমচর এবং রসুলপুরে তাদের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্র মামলার শিকার রতন গাজী।

খোদ চেয়ারম্যানের বড় ছেলে অপু ইয়াবা সেবন করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান আয়নালের ছোট ছেলে ইমন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চেয়ারম্যানের ভাগ্নে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ এ ব্যবসার একজন ইন্দনদাতা । যদিও তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার কোনো অভিযোগ স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেনা। অন্যদিকে চেয়ারম্যান তার চাচাত ভাই আতিকুর রহমান আতিকের অনেক সম্পদ জবরদখল করে নেওয়ার পর নি:স্ব আতিক এখন অনেকটাই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

কোনো চেয়ারম্যানের পরিবার যখন পুরেপুরি মাদক ব্যবসা এবং মাদক সেবনের মধ্যে চলে যায় তখন নৈতিকভাবেই ওই চেয়ারম্যানের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। তখন চেয়ারম্যানও তার বিরুদ্ধে যাতে কেউ মুখ খুলতে না পারে এজন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বলে অপরাধ বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।

অবরাধ বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব বলেছেন, চেয়ারম্যান সরাসরি মামলার সঙ্গে যুক্ত না থাকায় তাকে আইনগতভাবে দোষারোপ করা অসম্ভব কিন্তু সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো যাবেনা। সাধারণ মানুষও সময় সুযোগ পেলে এর বদলা নিতে পারে।

আয়নাল চেয়ারম্যান বলেছেন, তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র চলছে । স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্যই এসব মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি বলেছেন, তার কোনো ছেলে ইয়াবার ব্যবসা করে না, ইয়াবা খায়না। আর তিনি কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাননি।

আয়নাল আরো বলেছেন, তার বাড়িতে যদি ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র থাকে তাহলে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাক। যে সব মামলার কথা বলা হচ্ছে তা পুরোনো । এতো দিন প্রতিবাদ কেনো করা হলোনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন আয়নাল চেয়ারম্যান। তার আশঙ্কা তিনি যাতে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পান সেই জন্য তার বিরুদ্ধে কিছু কিছু লোক দুর্নাম ছড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা স্রেফ মিথ্যা এবং গুজব।