প্রচ্ছদ বাংলাদেশ খুলনা “কারা আসছে বাকৃবি ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে?”

“কারা আসছে বাকৃবি ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে?”

Loading

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মতবিনিময় ও সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ কর্মসূচির পর থেকেই বাকৃবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।

বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বয়স প্রায় ৪ বছর। কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে না পারা, হল কমিটি দিতে না পারা এবং ৫ই আগষ্টের পর সংগঠন কে গতিশীল করতে না পারা সহ নানা ব্যার্থতার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এর উপর।

এই চার বছরে তাদের নেতৃত্বে কোন কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে পারেনি বরং ৫ই আগস্টের পরে সাধারন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়ে তাদের ফটোসেশান করতে দেখা গেছে। গত ৯ মার্চ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শিবিরের ডাকে দেশব্যাপী নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধ এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে তাদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে এ নিয়ে খোদ নিজ সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি পন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমালোচনায় পরতে হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জন্য উর্বর হলেও তারা এখানে সংগঠন কে শক্তিশালী করতে ব্যার্থ বলে অনেকে মনে করেন। অনেকে সন্দেহ পোষন করেন সংগঠনের চেয়ে বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এর আগ্রহ বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারের কমিশন ও নিয়োগ বানিজ্যের দিকে।

নতুন কমিটির গুঞ্জন শুরু হওয়ায় ছাত্রদল করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা আছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। কার অনুসারী হবেন, নেতৃত্বে কে আসবেন আবার কে বাদ পড়বেন, কোন হলে কার অবস্থান কেমন হবে, রাজনীতি এবং স্থানীয় ভাবে কার প্রভাব কেমন এসব হিসাব মিলাতে ছাত্রদল করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা গলদঘর্ম।

সাধারণত শিক্ষার্থীরা সহ সবার মাঝে চর্চা রয়েছে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক আতিক আর নেতৃত্বে আসছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন হলে তার কোন রাজনৈতিক অবস্থান নেই। টাঙ্গাইল বাড়ি হওয়ার সুবাদে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার আশির্বাদে গত কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছিলেন।

অনেকের মতে আহ্বায়ক আতিক হচ্ছে ফেইসবুক ফটো নির্ভর নেতা। তিনি নিজেকে জাহির করতে গিয়ে ব্যাক্তি উদ্যোগে কিছু কাজ করে ও বক্তব্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের কাছে জোকারে পরিণত হয়েছেন।আহ্বায়ক হওয়ার এতো দিন পরেও তিনি তার উত্তরসূরী তৈরি করতে পারেনি।

আতিকের মতো একই ব্যার্থতার দায়ে নতুন কমিটিতে না আসার শঙ্কায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব শফিক। আপাদমস্তক আওয়ামী পরিবারের ছেলে ( বড় দুই ভাই এবং বাবা ছাত্রলীগ-যুবলীগের-আওয়ামীলীগের পোস্টেড)শফিক নেতৃত্ব পাওয়ার পর কতটুকু বিএনপি বা ছাত্রদলের হতে পেরেছেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে নিজ এলাকায়ই। ৫ই আগষ্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট (টেন্ডার ও নিয়োগ) এর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে তার ভালো আনাগোনা দেখা যায়। সেই সিন্ডিকেটটিই তাকে আগামী কমিটিতে নেতৃত্বে আনতে মরিয়া।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ উত্তর বঙ্গের একটি শক্তিশালী বলয় রয়েছে। বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সোয়াইব ছাত্রদলে তাদেরই প্রতিনিধি। আগামী কমিটিরতে নেতৃত্বে তার সম্ভাবনা প্রবল। উত্তর বঙ্গের অনেক শিক্ষার্থীই তার অনুসারী। সদস্য সচিব শফিক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সোয়াইব দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অনুষদ (কৃষি অর্থনীতি) এর এবং একই শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ টি অনুষদ রয়েছে। তাই একই অনুষদ এবং একই শিক্ষা বর্ষের দু’জন থেকে একজন নেতৃত্বে আসতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে।

আলোচনা সমালোচনার পরেও তিন জনের বাইরে যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তুষার এর নাম জোড়ালো ভাবে শোনা যাচ্ছে। ময়মনসিংহ শহরের স্থানীয় এবং ক্লিন ইমেজের হওয়ায় তাকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে। ঐ তিনজনের সিন্ডিকেটের বাইরে আলাদা প্রোগ্রাম করে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। নো পলিটিক্স ক্যাম্পাসে পলিটিক্স ওপেন হয় জুলাই’২৪ আন্দোলনের সম্মুখ যুদ্ধা তুষারের মাধ্যমেই। তিনি ক্যাম্পাসে ৭১ থেকে ২৪ এর শহীদদের স্বরনে পদযাত্রা করে অপর দুটি ছাত্রসংগঠন কে আদর্শিক লড়াইয়ে পিছিয়ে দেন। পরবর্তীতে দলীয় ব্যানারে প্রথমবারের মতো হলে ইফতার মাহফিল করে ও ভর্তি পরীক্ষায় দলীয় হেল্পডেস্ক খোলে নিজের স্বকীয়তা জানান দেন। বিভিন্ন হলে রয়েছে তার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ও অনুসারী। কমিটি পূর্নাঙ্গ না হওয়ায় এবং হল কমিটি দিতে ব্যার্থ হওয়ায় জুনিয়র নেতৃত্ব তৈরী হয়নি। যে দু-এক সক্রিয় তারাও নেতৃত্ব নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।

২১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি হওয়ার পর থেকে কেবল এই ক’জন কেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। বর্তমান সাধারণ ছাত্রদল কর্মীরা প্রহর গুনছে নতুন নেতৃত্বের জন্য।