গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৬

Loading

সময়ের খবর ডেস্ক:চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত গোপালগঞ্জ সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ন্যাক্কারজনকভাবে গণধর্ষণের শিকার হন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভূক্তভোগীসহ দুই শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে মেসে যাওয়ার সময় কতিপয় দুর্বৃত্ত নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়।

একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। সারাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে উক্ত পৈশাচিক ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ জানায়।

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর অভিযানে ২৫ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা হলেন- রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), পিয়াস ফকির (২৬), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), মোঃ নাহিদ রায়হান (২৪), মো. হেলাল (২৪), এবং (৬) তূর্য মোহন্ত (২৬)।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি অপরাধ চক্রের সদস্য। তারা সকলেই গোপালগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।

গ্রেপ্তারকৃত তূর্য মোহন্ত ব্যতীত তারা প্রায় ৮/১০ বছর যাবত নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, জুয়াসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে লিপ্ত ছিল। এছাড়াও তারা চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িত ছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল/কলেজের ছাত্রীদের উত্যক্ত করত বলে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেপ্তারকৃতরা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার পথে ভূক্তভোগীকে তার বন্ধুসহ দেখে ইজিবাইক থামিয়ে তাদেরকে নাম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং বিভিন্ন ধরণের অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। তাদের সাথে ওই শিক্ষার্থী এবং তার বন্ধুর বাকবিতন্ডা হয়।

পরবর্তীতে তাদেরকে জোরপূর্বক ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ভূক্তভোগীর বন্ধু বাঁধা দেয়ায় গ্রেপ্তারকৃতরা তাকে মারধর করে। এরপর গ্রেপ্তারকৃতরা ওই শিক্ষার্থীকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত রাকিব মিয়া ওরফে ইমন স্থানীয় একটি মাদ্রাসা হতে দাখিল ও আলীম সম্পন্ন করে। সে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে রিসেপশনিস্ট হিসেবে চাকুরী করত। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। পিয়াস ফকির গোপালঞ্জের একটি পাওয়ার হাউজে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে।

এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত প্রদীপ বিশ্বাস স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণী পর্যযন্ত অধ্যয়ন করে। সে গোপালগঞ্জে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করত। গ্রেপ্তারকৃত নাহিদ রায়হান স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক ২য় বর্ষে অধ্যয়ণরত।

গ্রেপ্তারকৃত মো. হেলাল স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়ণরত। সে একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার হিসেবে চাকরি করত।

গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি তূর্য মোহন্ত খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে, সে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়ণের জন্য বিদেশ গমন করে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে সে দেশে চলে আসে এবং গোপালগঞ্জে সদরে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করে।

তূর্যের বিরুদ্ধেও একটি মারামারির মামলা রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।