জাবির প্রশাসনিক ভবন ,তৃতীয় দিনের মত অবরুদ্ধ নেই কোন সমাধান ।

Loading

সাঈদ বিন ইসলাম জাবি প্রতিনিধি : বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রেখেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবরোধের তৃতীয় দিনে প্রথম বারের মত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আন্দোলনকারীদের সাথে ঘন্টাব্যাপী কথাবার্তা বললেও আসেনি কোন সমাধান।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে জাবির নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

এতে কয়েকজন শিক্ষকসহ জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। যার ফলে অবরোধের তৃতীয় দিনেও কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে না পারায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম। তবে ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমগুলো যথারীতি চলমান ছিল।
এদিকে গতকাল (বুধবার) অবরোধ চলাকালীন সময়ে প্রথম দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম ও অধ্যাপক আমির হোসেন মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় দফায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা ব্যর্থ হয়।

আজ (বৃহস্পতিবার) অবরোধ চলাকালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলার জন্য প্রথমবারের মত পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় উপ-উপাচার্যদ্বয় সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেন। এছাড়া অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে এসে

তাদেরকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানান উপাচার্য। তবে সেখানে উপাচার্য কোনো সমাধান দিতে না পারায় অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের তিনটি দাবির মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘিরে নির্মিতব্য তিনটি ১০ তলা হলের বিকল্প স্থান নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানান। এক্ষেত্রে প্রকল্প সম্পর্কিত আলোচনা উপাচার্য, দুইজন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে করবেন বলে নির্ধারণ করে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্মআহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজকে এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেনি। আমরা আমাদের দাবিতে অনড়। আজ বিকাল চারটা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। আমাদের দাবি না মানা হলে আলোচনা করে আরও কঠিন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অবরোধ চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আমরা তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। তবে হলের স্থান সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা সময় সাপেক্ষ। নির্ধারিত স্থান থেকে একটু এপাশ ওপাশ করা যেতে পারে।’

এছাড়া দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রকল্পে যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে। তাহলে আমি তৃতীয় কোনো পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, সম্পূর্ণ বিষয়ের তদন্ত হোক।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য গত বছরের ২৩ অক্টোবর ১৪৪৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য গত ১ মে টেন্ডার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলগুলো নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নির্মাণকাজ বাধাহীনভাবে সম্পন্ন করতে গত ৯ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও তার পরিবারের নেতৃত্বে শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা বাটোয়ারা করে দেয়। এর আগে গত ২৩ মে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টেন্ডার শিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে যে মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হচ্ছে তা অপরিকল্পিত-অস্বচ্ছ। পরবর্তীতে মাস্টারপ্ল্যান সংশোধনসহ দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।