ঠাকুরগাঁওয়ে সড়কে রাতে ঢালাই সকালেই উঠে গেছে কার্পেটিং

Loading

হুমায়ুন কবির,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জ উপজেলায় এলাকাবাসীর বাঁধা-নিষেধ উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে রাস্তার কাজ কার্পেটিং করার অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। দায়সারা ভাবে কাজ করায় পরদিন সকালে থেকে জুতার সঙ্গে উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। এ নিয়ে অভিযোগ করার পরও প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। ফলে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন যানবাহন ও পথচারীরা। আর বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেই তিনি রেগে যান বলে জানান এলাকাবাসী।

ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলামকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর যোগসাজশে কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ধূলামিশ্রিত পাথর ব্যবহারের সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও তা মানা হয়নি। তবে কাজ শেষে বিল পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রকৌশলীরাই সহযোগিতা করেছেন। জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর থেকে বাঘমারা পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় সেই রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রায় ২০ লাখ টাকায় ওই রাস্তার ১ হাজার মিটার অংশ ১৫ মিলিমিটার সিলকোড কার্পেটিং করার কাজ পায় ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আব্দুস সামাদ নামে এক ঠিকাদার। নিয়ম না মেনে এলজিইডিসহ বাস্তবায়নকারী দপ্তরকে ম্যানেজ করে এবং এলাকাবাসীর বাধাঁ উপেক্ষা করে গত ২৯ জুন রাতের বেলায় বৃষ্টির মাঝে সেই রাস্তায় কার্পেটিং এর কাজ করেন ঠিকাদারের লোক জন।

পরদিন সকালে এলাকার লোক জন সেই রাস্তা দিয়ে হাটলে জুতার সাথে উঠে আসে সিল কোড করা নতুন কার্পেটিং। বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ করা হয় উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে। অভিযোগের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলামকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। লোকজন রাস্তা দিয়ে হাঁটলে জুতার সঙ্গে উঠে আসে ওই সড়কের কার্পেটিং। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের বাঁধা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে রাস্তায় নিম্নমানের পিচের কার্পেটিংয়ের কাজ করেছে। যা হাত দিয়ে টান দিলে বা পা দিয়ে ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসীরা ।

স্থানীয় রায়হান নামে এক যুবক বলেন, এই রাস্তার কাজে শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে আসছে। রাস্তার কার্পেটিংয়ে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে হাত দিলেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। আমরা এলাকার লোকজন ঠিকাদারকে ভালোভাবে কাজ করতে বললে তিনি কোনো কথা শোনেননি।পথচারী লিমন হোসেন বলেন, কোনো গাড়ি এসে ব্রেক করলে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। আমরা চাই, ভালোভাবে এই রাস্তার কাজ আবাও করা হোক। যাতে রাস্তাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। তিনি আরও বলেন,ঠিকাদার দায়সারা ভাবে রাস্তার কাজ করে শান্তির বদলে এলাকায় দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বৃদ্ধ বলেন, সরকার এতো টাকা খরচ করে রাস্তা করেছে, সেখানে এলজিইডি ও ঠিকাদারের দুর্নীর্তির কারণে সব টাকা এখন পানিতে । হাত দিয়ে রাস্তার কার্পেট তুলা যাচ্ছে, এ পথ দিয়ে ভারি যানবাহন কিভাবে যাবে। সরকার রাস্তা করতে কি কম টাকা দেয়? এলজিইডি- ঠিকাদারের জন্য সরকারের বদনাম। নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ব্যবহার করে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী করে ঠিকাদার চলে গেছে। আয়মরা এই অনিয়মের বিচার চাই। বাঁধা দিলেও তারা শোনেননি। পরের দিন দেখা যায় জুতার সঙ্গে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।

বাঘমারা গ্রামের মুক্তারুল, পলাশ, লায়লী বেগম সহ বেশ কয়েকজন জানান, রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় ঠিকাদারের লোক জন রাস্তার কাজ করে। এলাকার দু-একজন রাতের বেলা কাজ করতে বাঁধা দিলেও তারা শোনেননি। পরের দিন দেখা যায় জুতার সাথে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে রাস্তার বেশির কার্পেটিং উঠে গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইঞ্জিনিয়ারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

গত কয়েকদিনে রাস্তার বেশির ভাগ কার্পেটিং উঠে গেছে। উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার আব্দুস সামাদ বলেন, কোন সমস্যা হলে এলজিইডির সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী কাজ করা হবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরির্দশন করে দেখার পর বলা যাবে কি হয়েছে। পরবর্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম বলেন, তার কাছে এলাকাবাসী ওই সড়কের সংস্কারকাজ টিকসই হয়নি বলে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুস সামাদ বলেন, কোনো সমস্যা হলে এলজিইডির সঙ্গে কথা বলে কাজ ঠিকঠাক করে দেব।

এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস জানান, আমরা চেষ্টা করি ভালভাবে কাজ বাস্তবায়ন করে নেয়ার। এলাকার মানুষ অভিযোগ করে ছিল। তখন কাজ ভালই হচ্ছিল। এখন কেন কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে খতিয়ে দেখা হবে।