এ আর আহমেদ হোসাইন(দেবীদ্বার-কুমিল্লা) :গরিবের চাউল আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলার ৩নং সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরকারের বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুস সরকারের ওএমএস’র ডিলারশীপ বাতিল করেছে প্রশাসন।
একই সাথে ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আব্দুল মান্নান মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুবিল ইউনিয়নে ওএমএস’র চাউল বিক্রয় করা হচ্ছে কিন্তু সাধারন ক্রেতারা চাউল পাচ্ছেন না। ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে ধরনা দিয়েও চাউল থাক দূরের কথা নানাভাবে তিরস্কার ও নাজেহাল হয়ে আসতে হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ভোক্তভূগীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সেল ফোনে জানালে তিনি উপজেলা কৃষিকর্মকর্মতা উত্তম কুমার কবিরাজকে প্রধান করে ৩সদস্যের একটি তদন্ত টিম করেন। উপজেলা কৃষিকর্মকর্মতা উত্তম কুমার কবিরাজ’র নেতৃত্বে ৩সদস্যের একটি টিম বৃহস্পতি ও শুক্রবার তদন্তে নামেন।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরজেমিনে স্থানীয়দের যতজনের সাথে সাথে কথা বলেছেন ওনারা কেউ ১০টাকা কেজি দরে চাউল পাননি এবং এ কর্মসূচী পূর্ব থেকে চলমান তাও কেউ জানেনা।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও তদন্ত টিম প্রধান উত্তম কুমার কবিরাজ জানান, এলাকায় তদন্তে যেয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে মনে হল ওএমএস’র চাউল বিতরণ কার্যক্রম সম্পর্কে ওই ইউনিয়নরে কেহই অবগত নন। প্রতি ইউনিয়নে উপকারভোগী ৫শত জন ১০টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাউল পাওয়ার কথা থাকলেও এ ইউনিয়নের কেউ পেয়েছেন তা জানেনইনা। এমনকি এ কর্মসূচীর আওতায় কার্ডধারী ৫শতজনের একটি কার্ডও গ্রাহকের কাছে পৌঁছে নাই। কার্ডধারীরাও জানেনা ওরা ওএমএস তালিকাভূক্ত আছেন।
এব্যাপারে সুবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল মান্নান মোল্লাকে আটক করে ওএমএস’র কার্ডগুলো গ্রাহকদের কাছে পৌঁছান নাই কেন জানতে চাইলে তিনিও ওই কার্ড সম্পর্কে কিছুই জানেনা বলে জানান। প্রমান করার জন্য তাকে নিয়ে ওএমএস ডিলারের বাড়িতে গেলে সে পালিয়ে যায়। পরে মেম্বারকে থানা পুলিশের হেফাজতে রেখে আসি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ওই কর্মসূচীর আওতায় পূর্বেও কাউকে চাউল দেয়া হয়নি।
ওয়াহেদপুর গ্রামের সরু মিয়া জানান, গত ৮এপ্রিল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরকারের ট্রাক্টর ভর্তি চাউল পাচারের বিষয়টি সন্দেহ হলে এলাকাবাসীকে জানাই। ট্রাক্টরের চালক ছিলেন রাঘবপুর গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন। সন্দেহ করার কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই ইউপি চেয়ারম্যান অতিতে নানা অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন, স্থানীয়রা সম্ভবত: এ বিষয়কি ইউএনওকে জানিয়েছেন।
এব্যপারে একাধিকবার চেষ্টা করেও সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরকারের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান জানান, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনার তদন্তে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার কবিরাজকে প্রধান করে ৩সদস্যে কমিটি করে দিয়েছি। তারা তদন্ত করে এসেছেন। প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ডিলার’র ডিলারশীফ বাতিল করা হয়েছে। এখন আমাদের সব চেয়ে বড় কাজ হল উপকারভোগীদের কার্ডগুলো উদ্ধার করা, কোথায় এবং কার কাছে সেগুলো রক্ষিত আছে তা উদ্ধার করে গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দেয়া, যাতে চলমান বিতরণকৃত চাউল থেকে তারা বঞ্চিত না হন। তিনি আরো জানান, অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরও গ্রাহকদের কাছে কার্ড পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি। এখন শোনছি তারাও কার্ডগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গরিবরে চাউল পাওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করতে যা করার তাই করা হবে। এ বিষয়ৈ কোন আপোষ নেই।