ধামরাইয়ের তামা কাঁসা শিল্প এখন বিলুপ্তের পথে

Loading

ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন শিল্প তামা কাসা । আমাদের দেশের মানুষদের মাঝে এই তামা শিল্পের পুরো কার্যক্রম খুব বেশি আলোচিত না হলেও প্রতিবছর ধামরাইয়ের এই তামা পল্লী ঘুড়ে যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্য প্রেমীরা। এখানে তামার ভাস্কর্য নির্মানের ইতিহাসটা পাল রাজত্বের পরে ১২ শতকের দিকে এই শিল্প হারিয়ে যেতে থাকে।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বাইবেল নামে খ্যাত আকম যাকারিয়া-র বাংলার প্রত্নসম্পদ বইয়েও এই নিদর্শনটি অনুল্লেখিত। শুধু তাই নয়, ১৯১৩ সালের পর ২০০৭ সালে শাওন আকন্দের লেখা “ধামরাই জনপদের কাঁসা-পিতল শিল্প” বইটিতেই প্রথম এই স্তম্ভ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হলো।

১৯৭০-র দশক পর্যন্ত সত্যিকারেরর এন্টিক-ই কেনাবেচা হতো ধামরাইয়ে। এন্টিক যখন শেষ হয়ে যেতে থাকলো, তখন, এন্টিকের মতো ভাস্কর্য তৈরি করে বিক্রি করার আগ্রহ থেকে ১৯৮০-র দশকে প্রথম এখানে কাঁসা-পিতলের ভাস্কর্য নির্মাণ করা শুরু হয়। যে পদ্ধতিতে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়, বাংলাদেশে তা নতুন হলেও পৃথিবীর ইতিহাসে তা নতুন নয়। বরং কয়েক হাজার বছরের পুরনো। এভাবেই শাওন আকন্দ ধামরাইয়ের কাসা-পিতল শিল্পের ধাতব জগতে প্রবেশের আগে আমাদেরকে ধামরাই অঞ্চলের এ যাবত কালের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস রচনা করেন।ধামরাইয়ের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বর্তমানে কাজ করছেন সুকান্ত বনিক। তার নিরলস শ্রম আর মেধার বদৌলতেই ধামরাইয়ে এখনো টিকে আছে এই তামা শিল্প।দুর্লভ ও নান্দনিক ভাস্কর্য তৈরি করেছেন সুকান্ত।

এসব ভাস্কর্য তৈরি পদ্ধতিও অবাক করার মতো। মোম দিয়ে তৈরি পদ্ধতি অবলম্বন করেই এসব ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। যে বিশেষ ভাস্কর্যটি তৈরি করা হবে তার একটা অবয়ব তৈরি করা হয় মোম দিয়ে। এরপর তাতে নানান নকশা ও সুক্ষ কারুকাজগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। এরপর মোমের সেই মূর্তির উপরে চড়িয়ে দেয়া হয় তিন স্তরের মাটির প্রলেপ। এরপর তা পোড়ানো হয়। ফলে ভেতর থেকে মোমের মূর্তিটি গলে বেরিয়ে আসে। থেকে যায় শুধু মাটির ছাচে মোমের মুর্তির প্রতিবিম্ব। এরপর সেই মাটির ছাচে গলে যাওয়া তামা ঢুকিয়ে তৈরি করা হয় এই ভাস্কর্যগুলো। যেকোনো অবয়ব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব এই ভাস্কর্যগুলোতে।বর্তমানে এই ভাস্কর্যগুলোর প্রধান ক্রেতা হলো বিদেশি ভাস্কর্য ব্যবসায়ীরা। মাত্র ৮শ ডলারে কেনা মুর্তিগুলোকে বিদেশীরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাম চড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করছে। অথচ আমাদের দেশে এর তেমন কোনো প্রচারই নেই।

এই শিল্পকে ভর করে এখনো দেশের হাজার হাজার কাঁসা শিল্পী বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কাঁসা শিল্পীরা জানান, তারা ঢাকার বকশীবাজার থেকে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচামাল কিনে নানা সামগ্রী তৈরি করে তা বিক্রি করেন মাত্র ২৭০ টাকায়। তবে পাইকাররা তাদের কাছ থেকে কম দামে কিনলেও বেশি দামে তা বিক্রি করেন।