ধামরাইয়ে প্রাথমিক সরকারী স্কুলের ক্লাশরোম ব্যবহার করে কোচিং বাণিজ্য

Loading

ঢাকার ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের মাদারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ আফরোজা সুলতানার সহযোগিতাই স্কুলের ক্লাশরোম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা কারিতেছে একই গ্রামের মোঃ মোবারক হোসেন।

তবে অনুসন্ধানে জানাযায় মাদারপুর গ্রামে মোবারক হোসেন হলেন মাদারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ আফরোজা সুলতানার স্বামী। আফরোজা স্বামীর সুলতানা দীর্ঘদিন যাবত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের এই ভাবে তার কাছে কোচিং করাতে বাধ্য করান। যে ছাত্র তার স্বামীর কাছে কোচিং করবে না তাকে পরীক্ষার মধ্যে নাম্বার কম দেওয়া হবে। কোচিং সেন্টার নয় যেন কসাইখানা। স্কুলে ক্লাশ নাম মাত্র করায় আফরোজা। এই ছাড়া কোচিং সেন্টারে ভর্তি না হলে ছাত্র-ছাত্রীদের সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা, স্কুলে নম্বর কম কিংবা ব্যবহার খারাপ করারও অভিযোগ রয়েছে । সেই সাথে আরো অভিযোগ রয়েছে স্কুলের সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার।

আজ সকাল ৮ ঘটিকার সময় মাদারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পরে। দেখা যায় একটি ক্লাশরোম ও শিক্ষকদের অফিসরোম খোলে মোঃ মোবারক হোসেন নামের ঐ ব্যাক্তি প্রায় ৩০জন শিক্ষার্থী নিয়ে কোচিং করায়তেছে। এই সময় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা এই স্যারের কাছে অনেক দিন যাবত পড়ি। কোচিং করার বাবদে আমাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ২০০-৪০০শত টাকা দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা আর বলে স্যার আমাদের স্কুলের কোন স্যার না। স্যারের বউ আমাদের স্কুলের ম্যাডাম(শিক্ষিকা)। ম্যাডাম আমাদের স্যারের কাছে কোচিং করতে বলেছে। কোচিং না করলে আমাদের পরীক্ষার সময় খাতায় নাম্বার কম দিবে ।

এই ব্যাপারে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ সালাউদ্দিন,সিয়াম, জাকির হোসেন,শাকিব, মারুফ , আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই স্যারের কাছে প্রাইভেট ও কোচিং করি। আমরা যদি স্যারের কাছে কোচিং না করি, তাহলে পরীক্ষার সময় খাতায় নাম্বার কমসহ আমাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে। এই সময় সালাউদ্দিন নামে ছাত্র আর বলে আমাদের সাথে একটি মেয়ে পড়ত তাকে দিয়ে ধান সিদ্ধ করার সময় তার হাতে আগুনের ছেকা লেগে হাত পুড়ে দীর্ঘ স্কুলে আসতে পারে নাই।

এই ব্যাপারে স্কুলের ছাত্রের বাবা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সুলতানা ম্যাডাম ছোট বাচ্চাদের সাথে প্রায় সময় খারাপ ব্যাবহার করে। সে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে নিজের বাড়ীর কাজ পর্যন্ত করায়।

এই ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বার বার বলাসত্বে ও আফরোজা ম্যাডাম সে কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে তার ইচ্ছামত বেআইনি ভাবে স্কুলের কক্ষ খোলে স্বামীকে দিয়ে কোচিং করান। তিনি আর বলেন,আমরা বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি।

এই ব্যাপারে স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মোঃ ছালাম বলেন, সরকারী স্কুলে ক্লাশরোম ব্যাবহার করে বাহিরের লোক কোচিং করাতে পারে না। তবে কে বা কারা কোচিং করায় তা আমার জানা নেই।

এই ব্যাপারে কোচিংয়ের মাষ্টার মোঃ মোবারক বলেন, আমি কিছু দিন ধরে স্কুলে বাচ্চাদের কোচিং করায়। চাবির কোথায় পেলে বললে তিনি বলেন আমার স্ত্রী সুলতানা এই স্কুলের মাষ্টার তাই আমার কাছে একটি চাবি থাকে। সেই চাবি দিয়ে স্কুলের ক্লাশরোম খোলে বাচ্চাদের পড়ায়। তিনি আর বলে আমার বাড়ীতে ব্লাকবোড নাই। তাই স্কুলে ব্লাকবোডের বাচ্চাদের পড়াতে সুবিধা হয়।এই জন্য স্কুলে পড়ায়।

এই ব্যাপারে সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ আফরোজা সুলতানা বলেন, আমার কাছে স্কুলের একটি চাবি থাকে সেই চাবি দিয়ে স্কুলের ক্লাশরোম খোলে আমার স্বামীর কোচিং করায়। আমি সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) মোঃ সাইদুর ভাইয়ের কাছে কোচিংয়ের বিষয়ে বলেছি।

এই ব্যাপারে মাদারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসাঃ রাবিয়া খাতুন বলেন স্কুলের ক্লাশরোম ব্যাবহার করে কোচিং করানোর ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। তবে স্কুলে দপ্তরী না থাকায় স্কুলের চাবি আমার কাছে একটি ও আমার সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানার কাছে একটি চাবি থাকে।

এই ব্যাপারে সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, সরকারী স্কুলে কোচিং করা সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবে স্কুলের ক্লাশরোমে কোচিং করানো হয় সেটা আমার জানা ছিল না। যদি স্কুলে কেউ কোচিং করায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এই ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ কাজী রাশেদ মামুন বলেন, সরকারী স্কুলের ভবন ব্যাবহার করে কোচিং করানোর বিষয়ে আমি জানি না। যদি তথ্য সঠিক হয় তাহলে সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।