পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম স্থবির

Loading

মোঃ রাসেল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি :করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের সাথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। কবে খুলবে তার কোনো সম্ভবনা দেখছে না ব্যবসায়ীরা। তবে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা বাণিজ্য সচলের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২২ মার্চ বেনাপোল স্থল ও ২৫ মার্চ থেকে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং ১৩ মার্চ থেকে পাসপোর্টযাত্রী ভারতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ৩০ এপ্রিল স্বল্প পরিসরে দুইদিন আমদানি বাণিজ্য সচল হলেও ভারত অংশে শ্রমিকদের বাধায় তা দুই দিনের মাথায় আবার বন্ধ হয়ে যায়। তবে এপথে বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা প্রতিদিন কমবেশি দেশে ফিরছেন।

ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে অবিলম্বে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা চালু করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। দুইদিনের জন্য শুধুমাত্র রফতানি বাণিজ্য চালু হলেও করোনা সংক্রমণের ভয় দেখিয়ে বনগাঁ ও পেট্রাপোলের কিছু শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতারা সীমান্তের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। কেন্দ্রের দাবি, এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে আমদানি-রপ্তানি চালুর উদ্যোগ নেয়নি। রাজ্যের এই ভূমিকাতেই বেজায় চটেছে কেন্দ্র।

সীমান্ত বাণিজ্য শুরুতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণেই পেট্রাপোলে স্থলবন্দরে দ্রæত আমদানি-রপ্তানি শুরু করতে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে এখনো প্রায় তিন হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরো কয়েক হাজার ট্রাকের মাল বিভিন্ন প্রাইভেট গুদামে রাখা আছে। কয়েক শ রপ্তানি পণ্য নিয়েও বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাধিক ট্রাক। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি পণ্যের গুণগত মান নষ্ট ও লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এদিকে বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের বনগাঁ শহরে নতুন করে কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বনগাঁ-বেনাপোল সড়কসহ গোটা বনগাঁ শহরকে ‘কনটেন্টমেন্ট জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে কবে থেকে আমদানি-রপ্তানি চালু হবে সেটা ওপারের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা বলতে পারছে না।

উল্লেখ্য, দেশের সরকার অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র ৩ ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এপথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে
প্রায় ৮০ হাজার মে. টন পণ্য আমদানি হচ্ছে। যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে।
আমদানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, শিল্পকারখানা ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্য, চাল, পিয়াজ, তুলা, বাস, ট্রাক ট্যাসিস, মোটরসাইকেল এবং পার্টস ও টায়ার রয়েছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, সাদা মাছ, ব্যাটারি, ওভেন গামেন্টস, নীটেড গামেন্টস, নীটেড ফেব্রিকস, কর্টন র‌্যাগস (বর্জ কাপড়) উল্লেখ্যযোগ্য

বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় গত ২৫ মার্চ থেকে রেলপথে ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। গত ১০ মে রেলপথে কিছু ফ্লাই অ্যাশ এসেছে। এখনও প্রবেশের অপেক্ষায় ওপারেও আটকা পড়ে আছে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, ফ্লাই অ্যাশ (সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহৃত), তুলা, পাথর, জিপসাম, গমসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। ভারত অংশে লকডাউন না ওঠা পর্যন্ত বাণিজ্য সচলের সম্ভবনা কম বলে জানান তিনি।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, অনেক দাবি জানিয়ে একমাস পর বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য সচল হয়েছিল। স্বল্প পরিসরে দুই দিন আমদানি চলে তা আবার বন্ধ হলো। কবে খুলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। এতে আটকে থাকা পণ্যে তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে খোলা রাখা শিল্প কারখানাগুলোতে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, ভারতে যাত্রী প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। তবে ভারত থেকে ফিরছেন বাংলাদেশিরা। যারা ফিরছেন তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ পরীক্ষা শেষে বেনাপোল পৌর বিয়ে বাড়ি ও যশোর গাজীর দরগা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। সেখানে ১৪ দিন অবস্থানে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি মুক্ত হলে তাদেরকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিদুল হক বলেন, ভারত থেকে পণ্য প্রবেশ না করায় বাণিজ্য সচল করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ খোলা আছে। এবং বন্দর পণ্যগার থেকে পূর্বেও আমদানিকৃত পণ্য কেউ খালাস নিতে চাইলে তা দেওয়া হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে লকডাউনের কারণে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢুকছে না। বেনাপোল বন্দরেও রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় আটকে পড়েছে ট্রাক চালকরা। তবে যাতে স্বল্প পরিসরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সচল হয় তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।