প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগতা যোগ্যতা না থাকলেও সে নিজ মেধা গুনে এখন দেশের সেরা উদ্ভাবক শার্শার মিজানুর রহমান

Loading

মোঃ রাসেল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি: আর দশটি ছেলের মত শার্শা উপজেলার অবহেলিত জনপদের ছেলে মিজানুর রহমান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগতা যোগ্যতা না থাকলেও সে নিজ মেধা গুনে এখন দেশের সেরা উদ্ভাবক। ইতিমধ্যে সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাত থেকে তার মেধা গুনের জন্য এবং তার উদ্ভাবনি আবিস্কারের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই উদ্ভাবকের তার উদ্ভাবানি পেশার পাশাপাশি রয়েছে একটি মায়ার, ভালবাসার হৃদয়।

তাই করোনা দুর্যোগের সময় সে যশোরের শার্শার এ প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত ছুটে চলেছেন অসহায় রাস্তার পাশে, ছাদের নীচে যারা শুয়ে থাকে যাদের খবর কেউ নেয়না সেই ভবঘুরে পাগল, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী মানুষ ও বেওয়ারিশ অভূক্ত কুকুরকে খাবার বিতরন করে।

যশোরের সেই দেশসেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজান বেওয়ারিশ অভুক্ত কুকুর, ভিক্ষুক, পাগল, প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরে মানুষের মাঝে একবেলা খাবার তুলে দিচ্ছেন। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের থাবায় সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও শ্রমজীবি মানুষ। তবে তাদের সাহায্যার্থে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাশে আছেন সরকার, অনেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠান কিন্তু বেওয়ারিশ অভুক্ত কুকুর, ভিক্ষুক, পাগল ও ভবঘুরে মানুষগুলোর কথা ভাবছেন কয়জন ? করোনা আতঙ্কে যশোরের শার্শা উপজেলার সব জায়গাতেই থেমে গেছে মানুষের কোলাহল। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বেকারি। এতে করে খাদ্য সংকটে পড়েছে পাগল, প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে মানুষ ও বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। কেননা হোটেল-বেকারির উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে এ প্রাণীটি। আবার রাস্তায় যখন মানুষের চলাচল থাকে অনেক মানুষের ভিড়ে কেউ না কেউ এই অসহায় পাগল গুলোর মুখে খাবার তুলে দেন। তবে আজ সবই বন্ধ তাই মানবিক কারণে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের তৈরি স্কুটি চালিয়ে পাগল ও অভুক্ত কুকুরদের খাবার দিয়ে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান মিজান।

শার্শা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, উদ্ভাবক মিজান বেওয়ারিশ অভূক্ত কুকুর, পাগল ও ভবঘুরেদের খাবার দিচ্ছেন। করোনার সময় দীর্ঘ হওয়ায় যাতে তাদের খাবার দেওয়া বন্ধ না হয় সেজন্যই আমরা তাকে ৪সহযোগিতা করছি। রবিবার (৩ মে) পর্যন্ত টানা ৩২ দিন ধরে বেনাপোল বাজার, শার্শা উপজেলা সদর, নাভারন ও বাগআচড়া বাজারের ৫০-৬০টি কুকুরকে বিস্কুট, পাউরুটি, খিচুড়িসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াচ্ছেন। এসব বাজারের ভিক্ষুক, পাগল ও ভবঘুরে মানুষের জন্য সাদা ভাত কিম্বা খিচুড়ি রান্না করার পর প্যাকেট করে তাদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন।

মিজানুর রহমান মিজান বলেন, লকডাউনের শুরুতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিলি, মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও সাবান দিতে গিয়ে দেখেছি হাট বাজারে পাগল, প্রতিবন্ধী ও কুকুরগুলো অনাহারে কাঁদছে, হন্যে হয়ে খাবার খুঁজছে। তখন অনুভব করলাম এদেরও ক্ষুধা আছে, খাবারের জন্য ওরা হাহাকার করছে। করোনায় যখন রাস্তায় কোন মানুষই নেই এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরী, তাই সেদিন রাতেই এদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে বেরিয়ে পড়ি। আজ ৩০ দিন যাবত কুকুরগুলোকে একবেলা করে খাবার দিচ্ছি। মাঝে মধ্যে শার্শা থেকে ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলাতেও যাচ্ছি।

মিজান বলেন, কুকুরগুলো এখন আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। রাস্তায় যখনই বের হই তারা আমার পিছু নেয়। আমার দোকানের সামনেও ১০-১৫টি কুকুর সার্বক্ষণিক থাকে। ওদের ভালোবাসা পেয়ে আমি মুগ্ধ। আমার এই কাজে সহযোগিতা করেছেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও ফেসবুক বন্ধুরা।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, দেশসেরা উদ্ভাবক মিজান উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে যেসব ভবঘুরে পাগল, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী ও কুকুর থাকে তাদের মাঝে প্রতিদিন খাবার সরবরাহ করছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা করছি।