ভারতে সোয়াইন ফ্লু,‘আক্রান্তে সংখ্যা ৭৫০০মৃত৮৪০-এর বেশি ।

Loading

পাশ্বর্বতী দেশ ভারতে ফের সোয়াইনফ্লু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন বছরে সেদেশে ফের সোয়াইন ফ্লু-এর প্রকোপের মুখে উত্তর ভারত। গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজধানী দিল্লি, রাজস্থান, গুজরাত এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষ এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে উত্তর ভারতের ওই রাজ্যগুলিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা যা ছিল, এ বছরের শুরুতে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যাটা পৌঁছেছে সাড়ে সাত হাজারে।

২০১৮ সালে রাজস্থানে সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে ২২১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সেখানে। সোয়াইন ফ্লুয়ের জেরে দেশজুড়ে যে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছে, তার ৪২ শতাংশই ঘটছে রাজস্থানে। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাদের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫৫।

কাশ্মীর উপত্যকায় মহামারি, জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবা দফতরের প্রধান এসএম কাদরি বলেন, “গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাশ্মীরে ৩ হাজার ১৬৮ মানুষ সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৫। যার মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়।

আজ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী সংসদের উভয় কক্ষে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ২০১০ সালে যে ভাইরাসে প্রায় ১৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন, সেই এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাসই এবছরও আক্রমণ করেছে। রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্থান আর গুজরাতের পরিস্থিতিই সবথেকে ভয়াবহ।

ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা আজ সংসদে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন গত দুমাসে যে প্রায় সাড়ে আটশো মানুষ সারা দেশে যে ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জাতে মারা গেছেন, সেটি টাইপ এ ভাইরাস।

এইচ১ এন ১ বা সাধারন ভাষায় সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস বছরের এই সময়েই সবথেকে বেশী ছড়ায় আর প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আজ জানিয়েছে তারা সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপের দিকে গভীর নজর রাখছে কিন্তু এখনও সেটা মহামারীর আকার ধারন করে নি।

এবছর ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে ১০৫ জন সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে রোগ নজরদারি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন চিকিত্সক সোনম নেগি। তিনি বলেন, “সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছি আমরা। হেল্থকেয়ার কর্মীদের টিকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী দিল্লিতে ১ হাজার ১১ জন মানুষ সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে। যার মধ্যে গত এক সপ্তাহেই ৪৭৯ জনের শরীরে এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাস ধরা পড়েছে।রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে জানা গিয়েছে। সফদরজং হাসপাতালেও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এইমসে মৃত্যু হয়েছে এক রোগীর।তবে সরকারি সূত্রে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুসংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি।গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুজরাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯৮ দাড়িয়েছে। যার মধ্যে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যে।

মি. নাড্ডা সংসদে তাঁর বিবৃতিতে বলছিলেন, “যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ অন্যান্য রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর পরে এইচ ১ এন ১ ভাইরাসের আক্রমণ তাঁরা আর সামলাতে পারেন নি। এমন তথ্যও আসছে যে অনেকে আগে থেকে না বোঝার ফলে অনেক দেরীতে চিকিৎসা করাতে এসেছেন।“

সরকার যদিও দাবী করেছে আজ যে সোয়াইন ফ্লুর ওষুধ ট্যামিফ্লু পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে প্রতিটা রাজ্যেই, তবে পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকেই অভিযোগ উঠেছে যে সব দোকানে ট্যামিফ্লু ওষুধটা পাওয়া যাচ্ছে না।

মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস এইচ ১ এন ১ এর জিনগত কোনও পরিবর্তন হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তারও কোনও ভিত্তি নেই।

রাজস্থান আর গুজরাতেই সোয়াইন ফ্লুতে মৃত্যুর সংখ্যা সবথেকে বেশী হলেও পশ্চিমবঙ্গেও সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ জন, আর ৮০ জনের রক্তে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস পাওয়া গেছে।