সিঙ্গাইরে সেভ সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ

Loading

সিঙ্গাইর(মানিকগঞ্জ)প্রতিনিধি:মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সমিতির গ্রাহকরা আমানতের টাকা উদ্ধারে উপজেলা সমবায় অফিস, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

এতে মাসের পর মাস চলতে থাকলেও পাওনা টাকা উদ্ধার হচ্ছে না। অনেক গ্রাহক তাদের শেষ সম্বল সমিতিতে রেখে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

উপজেলা সমবায় অফিস ও গ্রাহক সূত্রে জানাগেছে, সিঙ্গাইর উপজেলার শায়েস্তা ইউনিয়নের স্কুল প্লাজায় ২০১২ সালে সেবা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতি কার্যক্রম শুরু করে। সমিতিটির বর্তমান অফিস শাহরাইল বাজারের বিসমিল্লাহ মার্কেটে। তবে অফিস বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। সেবা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতিটির সভাপতি জগোবন্ধু সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবু সাঈদ। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমান গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ জন। শুরু থেকেই সমিতিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রাহকদের কাছ থেকে ডিপিএস আমানত, এককালীন আমানত, মাসিক মুনাফা আমানতসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে।

সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গেছে, শায়েস্তা ইউনিয়নের শাহরাইল বাজারের বিসমিল্লাহ মার্কেটের তৃতীয় তলার সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির অফিসে ঝুলছে তালা। কাগজ কলমে সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতি নাম হলেও সাইনবোর্ডে লেখা সেভ বাংলাদেশ।
এছাড়া সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনের জন্য আবেদিত। অফিসের প্রতিবেশি ব্যবসায়ীরা বলেন, অফিস কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবু সাঈদ অফিস খোলে কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যান।

গোপাল নগর গ্রামের গ্রাহক কোহিনূর ইসলাম বলেন, সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমিতিতে লাভের আশায় ৫ লক্ষ টাকা রাখি। ২ বছর যাবৎ আমাকে কোন টাকা দেয় না। টাকা চাইলে শুধু সময় চায়। আমার স্ত্রী একজন ক্যানসারের রুগী। তার চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। সমিতির টাকা না পেলে স্ত্রীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। সমিতির অফিসে গেলে অফিস বন্ধ পাই। থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।

শাহরাইল বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, শতকরা ৭ শতাংশ লাভের আশায় প্রতি মাসে দুইশত টাকা সঞ্চয় ও এককালীন ১ লক্ষ টাকা রাখি। এপর্যন্ত আমার ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমেছে। টাকা চাইলে দেই দিচ্ছি বলে মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছেন। প্রায় দুই বছর ধরে ঠিক মতো অফিসও খোলা থাকে না। সমিতিতে আমার মতো প্রায় ৩ শতকের বেশি গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৩/৪ কোটি টাকা এখন সমিতির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের পকেটে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবু সাঈদ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর সমিতির গ্রাহকরা ক্ষুদ্র ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। একই সময় সব গ্রাহক এক সাথে এককালীন টাকার জন্য চাপ দেয়। এতে লেনদেনে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

সিঙ্গাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন , ২০১৯ সালের অডিটে সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির কার্যক্রমে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর থেকে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ আসে। বর্তমানে ১৪ জন গ্রাহক তাদের টাকার দাবীতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, সেভ সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমবায় সমিতির নামে যারাই সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে সমবায় সমিতির রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে।