মোঃএনায়েত হোসেন,নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: খালের মধ্যে, পরিত্যক্ত ডোবায়, পুকুরে,বিলে, চাষিদের খামারে ভাসছে মৃত মাছ। তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে বাতাসে। এতে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপের ৯টি ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামে এই চিত্র।
নিঝুমদ্বীপে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে পানি সহজে লোকালয়ে ডুকে পড়ে। এ কারণে বুধবার ও বৃহস্পতিবার অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেসে যায় অনেকের ব্যক্তিগত পুকুর ও খামারের মাছ। অতি জোয়ারের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ত থাকায় মিঠা পানির এসব মাছ অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়।
নিঝুমদ্বীপের বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুই পাশে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা অসংখ্য মৃত-মাছ পড়ে আছে। কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ায় এসব মাছে এখন পচন ধরেছে। এ কারণে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে মারাত্মকভাবে। অনেককেই নাকে কাপড় দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে। শুধু রাস্তার পাশে নয়, বসবাস করা বাড়িতেও এই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বন্দরটিলা বাজারে উত্তর পাশে নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্টের ম্যানেজার আব্দুল জলিল বলেন, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য রিসোর্টের সামনে একটি পুকুর খনন করা হয়। অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেসে গেছে সেই পুকুরটিও। এখন পুকুরে ভাসতে থাকা পঁচা মাছের দুর্গন্ধ রিসোর্টে থাকা যায় না।
একই চিত্র নিঝুমদ্বীপের প্রতিটি গ্রামে। নিঝুমদ্বীপের ২নং ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধা বাজারের পাশে চৌধুরী মৎস্য খামারের মালিক এমরান চৌধুরীর জানান,প্রায় ১৬ একর জায়গায় তার এই খামারটি তৈরি করা হয়েছে। বুধবারের অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেসে গেছে পুরো খামারটি। এ কারণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে নিঝুমদ্বীপে ছোট-বড় প্রায় ৫০টি মৎস্য খামার রয়েছে। এসব খামারে কেউ মাছের পোনা তৈরি করে বিক্রি করেন। কেউ আবার পোনা চাষ করে বড় মাছ বিক্রি করে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে সবকটি খামার ভেসে গেছে বলে জানান ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন।
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র দাস জানান,নিঝুমদ্বীপে মৃত মাছের দুর্গন্ধ ছড়ানোর কথা শুনেছি। মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী দুই একদিনের মধ্যে একটি তালিকা জেলা অফিসে পাঠানো হবে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে হরনী, চানন্দী, তমরদ্দি, সোনাদিয়া, চরকিং, চরঈশ্বর ও নিঝুমদ্বীপসহ ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। হাতিয়ায় বেড়িবাঁধের অন্তত ১৩টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নিঝুমদ্বীপে। এই ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে চলে এসেছে বনের হরিণ।