এক মাসের মধ্যে মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত ।বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

Loading

পোশাক শিল্পের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় সদ্য বাস্তবায়নাধীন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এক মাসের মধ্যে মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

মতিঝিলের শ্রমভবনে মঙ্গলবার মালিক, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মনুশি ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মালিক পক্ষের ৫ জন, শ্রমিক পক্ষের ৫ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে মোট ১২ সদস্যের কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।’

তিনি বলেন, ‘মজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে।’

এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা না করে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানান নতুন এ বাণিজ্যমন্ত্রী।

‘জানুয়ারি মাসে কোনো শ্রমিককে কম বেতন দেয়া হবে না। কোনো গ্রেডে কারও যদি বেতন কমে যায়, তবে সেটা হিসাব করে সমন্বয় করা হবে। বকেয়া আকারে শ্রমিকরা সেই বেতন পেয়ে যাবেন’বলেন টিপু মুনশি।

বর্তমান শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে শিল্পের বাইরের লোকের ইন্ধন আছে বলেও নিজের সন্দেহের কথা জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শ্রমিকরা যাতে কোনো রকম গুজব কিংবা উস্কানিতে পা না দেন আমরা সেই অনুরোধ করছি। আজকের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে তারা শ্রমিক না। তারা এ ট্রেডের বন্ধু না। তাদের কঠোর হাতে দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক একটা বাইসাইকেলের দুই চাকা। তাদের এক সঙ্গেই এগোতে হবে। কোথায় কোনো ইরেগুলারিটি থাকালে সেটা দেখা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন রকম প্রচারপত্র লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে অনলাইনে। আমরা বরাবর দেখেছি, প্রত্যেক ঘটনার ক্ষেত্রে এ ধরনের অপকর্ম ঘটছে। এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত শ্রমিকবান্ধব। তিনি নিজেই সুপারিশ করে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। এখন নতুন মজুরি কাঠামোর কোথাও কোনো অসুবিধা থাকলে আলোচনা করে তা ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই আর কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।’

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে একই কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন একই কথা বলেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন-বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ নেতা আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে সরকারি মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত রোববার থেকে টানা তিনদিন সাভারের হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা, রাজধানীর উত্তরা ও কালশীতে বিক্ষোভ এবং রাস্তা অবরোধ করে আসছিলেন পোশাক শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। দুপুরের পর থেকে কয়েক দফায় উত্তরার আজমপুর, দক্ষিণখান এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর বিকেল পৌনে ৫টায় এলাকা ছাড়তে শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা।