শিশুর সার্বিক বিকাশে মূল্যবোধ শিক্ষা
আফসরী খানম (গোহালাকান্দা): মূল্যবোধ হলো এমন একটি বিষয় যা প্রতিটি মানুষ শৈশবকাল থেকেই দীর্ঘদিনের আচার আচরণ, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জন করে থাকে। পরিবার হলো শিশুর মুল্যবোধ শিক্ষা অর্জনের ভিত্তি। পারিবারিক গণ্ডির বাইরে শিশুর মূল্যবোধ বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয় বিদ্যালয়ে এসে।
পরিবার ও বিদ্যালয়ের মূল্যবোধের চর্চা শিশুর পরবর্তী জীবনের আদর্শবান, দেশপ্রেমিক ও বিশ্বনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার প্রেরণা যোগায়। জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপকল্পটি হলো “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম ও সুখী বৈশ্বিক নাগরিক”। বর্তমানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর রূপকল্পটিতে শিশুকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ, জাতীয় ইতিহাস সংস্কৃতি লালনকারী সৎ, নৈতিক, মূল্যবোধসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক, দক্ষ, সৃজনশীল, আত্ববিশ্বাসী ও সুখি হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখা হয়েছে। প্রাথমিক স্তর থেকেই শিশুর মধ্যে মূল্যবোধ চর্চার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাঠ্যবইয়ের বিষয়সমূহের মধ্যে মূল্যবোধ অর্জনে সহায়ক ঘটনা, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি সংযোজন করা হয়েছে। শ্রেণিতে শিশু শুধুমাত্র জ্ঞানই অর্জন করবে না তার পাশাপাশি মূল্যবোধ অর্জনে সহায়ক কার্যাবলীও পাঠপরিকল্পনায় বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে বলা হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রমটি নির্দিষ্ট যোগ্যাতার আলোকে এমনভাবে পরিমার্জিত করা হয়েছে যেখানে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিশু অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সর্বোত্তম প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হবে। এখানে উদাহরণসরূপ বলা যায়ঃ একটি গাড়ি কিভাবে চালাতে হয় তা যখন বই পড়ে, দেখে বা শুনে একজন শিক্ষার্থী জানতে পারে তখন তার জ্ঞান অর্জিত হয়।
ঐ শিক্ষার্থী যখন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশগুলো হাতে কলমে পরিচালনা করতে শিখে অর্থাৎ গাড়ি যখন সামনে পেছেনে ডানে বামে চালাতে পারে, ব্রেক করতে পারে তখন তার দক্ষতা অর্জিত হয়। আর যখন চালিয়ে নিজের ও রাস্তার সকল মানুষ, প্রানী ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে তখন ঐ শিক্ষার্থীর গাড়ি চালনা বিষয়ে যোগ্যতা অর্জিত হয়। এভাবে বর্তমান পরিমার্জিত শিক্ষক্রম ২০২১ এর মাধ্যমে শিশু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপটে প্রয়োগে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমান পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে তাই যোগ্যতার চারটি উপাদান হিসেবে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি মূল্যবোধকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যোগ্যতার ধারণায়নের প্রেরণা হিসেবে উপলব্ধি ও অনুধাবন করে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও গুণাবলী এই চারটি উপাদানের মধ্যে নিবিড় আন্তঃসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যোগ্যতার ধারণাকে এই শিক্ষাক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে। শিক্ষাক্রমের রূপকল্প, অভিলক্ষ্য, ১০টি মূলনীতি, ১০টি মূলযোগ্যতা, ১০টি শিখনক্ষেত্র, বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা, প্রাথমিক স্তরের শিখনক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই মূল্যবোধের বিষয়টি বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। শিক্ষাক্রমে মূল্যবোধ চর্চার জন্য যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সেগুলো হলোঃ সংহতি, দেশপ্রেম, সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধা,সম্মান, শুদ্ধাচার।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সমাপনান্তে শিক্ষার্থীর মধ্যে যেসব মানবিক গুণাবলী প্রত্যাশা করা হয়েছে সেগুলো হলোঃ সততা, পরিশ্রমী, গণতান্ত্রিক, অসম্প্রদায়িক, উদ্যোগী, ইতিবাচক, নান্দনিক, মানবিক, দায়িত্বশীল ও সহমর্মিতা। এছাড়া শিক্ষাক্রমে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শিক্ষার্থীর কাঙ্খিত দক্ষতার ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষাক্রমে দক্ষতা হচ্ছে যোগ্যতার সামগ্রীক ধারণার অংশ যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ ইত্যাদির অর্জন পারস্পরিক নির্ভরশীল। যেমনঃ জ্ঞান অর্জনের জন্য জ্ঞানগত দক্ষতার প্রয়োজন আবার মূল্যবোধ চর্চার জন্য মনোসামাজিক ও আবেগীক দক্ষতার প্রয়োজন।
একইভাবে ব্যবহারিক দক্ষতা বা আবেগীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য জ্ঞান অর্জন এবং মূল্যবোধ চর্চা জরূরী। বর্তমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে প্রযুক্তির জ্ঞান শিক্ষার্থীর জন্য যতটা প্রয়োজন সেই সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের চেতনা গড়ে তোলাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী মূল্যবোধ অর্জনের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে অভিযোজনে সক্ষম হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ভবিষ্যতের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আত্বপ্রকাশ করবে এটা আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি।
আশুলিয়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ভুয়া সমন্বয়ক গ্রেফতার
আশুলিয়ায় সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে মো. আজিজ (২৭) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
রোববার রাতে আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে প্রতারক আজিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার ব্যবসায়ী মানিক মিয়া। এর আগে তাকে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে সাধারণ জনতা।
গ্রেফতার আজিজ আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের মধুপুর তালটেকী এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, রোববার রাতে আজিজ ও তার সঙ্গী জাহাঙ্গীরসহ অজ্ঞাত ২০/২২ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে আশুলিয়ার শ্রীপুর পাইকারি কাঁচা বাজারে ভুক্তভোগী মানিক মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান।
এ সময় তারা নিজেদের সাভার-আশুলিয়া এলাকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও গুলি আছে জানিয়ে তল্লাশি করতে চায়। এতে বাধা দিলে আজিজ ভুক্তভোগীকে গালিগালাজ ও হুমকিধামকি দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় তল্লাশি করেন। বাসায় কোনো কিছু না পেয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চার দিনের সময় বেঁধে দেয় আজিজ।
ওই সময়ে টাকা প্রদান না করলে ভুক্তভোগীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় আসামি করা হবে বলে হুমকি দেয়। পরে কোনো উপায় না পেয়ে বিষয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের জানান ভুক্তভোগী।
এ ঘটনায় রাতেই অভিযুক্ত আজিজকে ডেকে নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মানিক মিয়া বলেন, আমাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য আজিজ নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে হুমকি দিয়েছে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডাকা হলে তার প্রতারণার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে প্রমাণিত হয়। পরে তাকে মারধর করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকদিন আগে স্থানীয় বিভিন্ন আওয়ামী নেতা, সাধারণ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের নামে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আজিজের কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতারণার অভিযোগ থাানয় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমিনবাজারে শিশুসহ বাবাকে হত্যা করে বালুচাপা, লাশ বের করল শিয়াল
সাভারের আমিনবাজারে দুই বছরের শিশুসহ বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর থেকে নিহত ব্যক্তির খামারের রাখাল পলাতক রয়েছেন।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টারদিকে আমিনবাজারের বরদেশির রুপালি সৈকত হাউজিং কোম্পানির ভেতর থেকে শিশুর খণ্ডিত মরদেহসহ বাবার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, কুষ্টিয়া জেলার ফুয়াদুল ইসলাম (৫৪) ও তার দুই বছরের ছেলে আশিক।
জানা গেছে, ফুয়াদুল ইসলাম আমিনবাজারের বরদেশি গ্রামের রুপালি সৈকত হাউজিং কোম্পানির ভেতরে একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে রাখালের মাধ্যমে ৪টি গরু ও তিনটি বাছুর পালন করতেন। সেই রাখালের নাম জয়। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, ফুয়াদুল ইসলাম বেশ কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় ৪টি গাভী ও তিনটি বাছুর পালন করে আসছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী গ্রামে থাকেন। এখানে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তিনি। সেই স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তান হলে ৩/৪ মাসের মাথায় স্ত্রী তাদের ছেড়ে চলে যান। তখন থেকে ফুয়াদ শিশু সন্তানকে দেখাশোনার পাশাপাশি গরুর খামার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খামারের রাখাল তাদের হত্যা করে গরু আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রোববার ওই রাখাল ফুয়াদুল ইসলামের খামারের গরু বিক্রি করতে আসেন। কিন্তু এলাকাবাসী মালিক না থাকায় গরুগুলো বিক্রি করতে দেননি। স্থানীয়রা মালিকের উপস্থিতিতে গরু বিক্রি করতে বললে তিনি চলে যান। সোমবার খামারের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা খামারের ভেতরে গিয়ে বাবা ও ছেলের লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ খামারের ভেতরে বালুচাপা দেওয়া ছিল। কিন্তু শিয়াল বালু খুঁড়ে মরদেহ বের করলে দুর্গন্ধ বের হয়। নিহত শিশুর মরদেহ শিয়াল টেনেহিঁচড়ে খণ্ড খণ্ড করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ৫/৬ দিন আগে তাদের হত্যা করে বালুচাপা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জয় নামের ওই রাখাল পলাতক রয়েছেন। পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা করছে।
সাভার আশুলিয়া গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা বন্ধে আজ রাত থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান
বিভিন্ন দাবিতে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে তৈরি পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই আন্দোলনে ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে আজ সোমবার রাত থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
রাজধানীর সচিবালয়ে আজ বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম যৌথ অভিযান শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের কোনো ধরনের হয়রানি না করতে আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল রাকিব বলেন, বর্তমান অস্থিরতার পেছনে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। তাদের লোকজন লুঙ্গি পরে হেলমেট মাথায় দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে অস্থিরতা তৈরি করছেন এবং কারখানা ভাঙচুর করছেন। ফলে যাঁরা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে আন্দোলনে নামাচ্ছেন এবং শ্রমিক না হয়েও যাঁরা আন্দোলন করছেন ও কারখানা ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
পুলিশ কর্মকর্তা কাফীর বিরুদ্ধে দুই মামলা, রিমান্ড চাইবে পুলিশ
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপার নিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল কাফীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।
দু’টি মামলার মধ্যে লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা এবং হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কাফীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো: রবিউল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রিমান্ডে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে ৫ আগস্ট আশুলিয়ার ঘটনায় কী পরিস্থিতি হয়েছিল। কার নির্দেশনায় গুলি করে লাশ ভ্যানে তোলা হলো এবং কার নির্দেশে আগুন দেয়া হলো।
এর আগে সোমবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহিল কাফীকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েপড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ সদস্য কয়েকটি লাশ একটি ভ্যানে তুলে সেগুলো ব্যানার দিয়ে ঢাকছেন। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরপরই ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া থানার কাছে এ ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
গুগলের জিওলোকেশন উপাত্ত ও আশপাশের ছবি বিশ্লেষণ করার পর পুলিশ সূত্র ভিডিওটির তারিখ ও অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরোর ফ্যাক্ট-চেকিং প্রধান কদর উদ্দিন শিশির গণমাধ্যমকে জানান, বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কাছে থানার সামনের একটি গলিতে এ ঘটনা ঘটে।
সাধারণ পোশাক ও পুলিশের হেলমেট-বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরা অন্য পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগই একই পুলিশ শাখার।
নতুন পররাষ্ট্র সচিব করা হচ্ছে জসীম উদ্দিনকে
পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার স্থলে নতুন পররাষ্ট্র সচিব করা হচ্ছে রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে। আগামীকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা-বেইজিংয়ের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন পেশাদার কূটনীতিক জসীম উদ্দিন। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে তার নতুন সচিব হিসেবে কাজ শুরু করার সম্ভবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জসীম উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে তিনি কাতার এবং গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন নয়াদিল্লি, টোকিও, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইসলামাবাদেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
কনস্যুলার পরিষেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পুরস্কার পায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে, এখনও আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আজ রাতের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কাল থেকে তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হবে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাসুদ বিন মোমেনকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন মাসুদ বিন মোমেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টাও বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি কর্মকর্তাদের জানান, নতুন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন।
সন্ধ্যায় বিদায় অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এখন থেকে নতুন পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব কে পালন করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, কাল (সোমবার) প্রজ্ঞাপন হবে।
মাসুদ বিন মোমেন ১৯৮৫ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। স্বাভাবিক নিয়মে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তার অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছর তাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ৫ ডিসেম্বর।
নড়াইলে যুবককে কুপিয়ে জখম
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে নড়াইলে ইটভাটা মালিক এক যুবককে কুপিয়ে শরীর থেকে প্রায় হাত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। মারাত্মক যখম করা হয়েছে তার শরীরের নানা স্থান।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে হামলার শিকার হন ঐ যুবক। তার নাম আতাউর রহমান আফতাব।
মুমূর্ষু আফতাবকে নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হামলায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কালিয়া উপজেলার বাবরাহাছলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজ্জামেল হোসেন পিকুল গ্রুপ ও কাঞ্চনপুর গ্রামের নাজির আহমেদ গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের।
এর জেরে সম্প্রতি দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান উত্তেজনার এক পর্যায়ে নাজির আহমেদের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আফতাব প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হলেন।
রোববার বিকালে ঘটনার সময় আফতাব নিজের ইটভাটায় যাওয়ার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলে পড়ে। এসময় তাদের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে আফতাবের বাম হাত বাহু বরাবর দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। ভয়ানক জখম হয় তার দেহের বিভিন্ন স্থান।
এ অবস্থায় স্বজনরা সংকটাপন্ন আফতাবকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাপাতাল নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা উচ্চতর চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
আফতাব স্থানীয় আসাদ মোল্লার ছেলে । এ ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার শামি আহমেদ।
হাসিনার পতনে রেমিট্যান্সে লাফ, আগস্টে এলো ২২২ কোটি ডলার
শেখ হাসিনার পতন আর আর্থিক খাত সংস্কারের খবরে সুদিন ফিরেছে প্রবাসী আয়ে। জুলাইয়ে ধস নামলেও গেল আগস্টে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিবারের মতো এবারও প্রবাসী আয় সংগ্রহে এগিয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ভাটা পড়ে প্রবাসী আয়ে।
১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় দেখে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার পদত্যাগ আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে ২২২ কোটি বা ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৬ শতাংশ বেশি।
এর আগের মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আগস্ট মাসের প্রথম ২৮ দিনে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২০৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের একই সময়ে ছিল ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টের প্রথম ৩ দিন পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর ৪ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ এ সময়ে আগের ৩ দিনের চেয়ে ৪ গুণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা।
বংশাল থেকে আটক হাজী সেলিম
বহুল আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে রাজধানীর বংশাল থেকে আটক করা হয়েছে।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার এক কর্মচারী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, হাজী সেলিমকে আটক করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে কোনো এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
বিস্তারিত আসছে…