কুবি প্রতিনিধি : বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের রাস্তা দিয়ে বিরামহীন চলাচলকারী পিকনিক বাসের হর্ণ, মাইক-সাউন্ডবক্সের আওয়াজ আর পিকনিক স্পটের ডিজের শব্দে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি এ রাস্তায় প্রতিদিন শয়ে শয়ে পর্যটকবাহী বাস চলাচল করলেও নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড কিংবা গতিরোধক। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।অন্যদিকে এ পর্যন্ত এসব ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ আসেনি। অথচ, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, আঞ্চলিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসের পাশের বিভিন্ন পিকনিক স্পটে ঘুরতে আসা এসব বাসের নিরাপদ পার্কিং এ পরিণত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নতুন নির্মিত রাস্তা এবং অন্যান্য জায়গাগুলো।অবস্থানগত দিক দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে ঐতিহাসিক ময়নামতি বিহারের কাছেই অবস্থিত। ফলে বছরের শীত মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশে দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।
কিন্তু গত প্রায় দুই বছরের ব্যবধানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে লালমাই পাহাড় ও টিলাগুলোতে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫-৬ বেসরকারী টি পিকনিক স্পট ও পার্ক। চারদিক থেকে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে রেখেছে৷
ক্যাম্পাসের উত্তর দিকের স্বপচূড়া পার্ক, ব্লু ওয়াটার পার্ক, কাশবন রিসোর্ট, দক্ষিণ দিকের ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্কসহ বিভিন্ন পার্ক-রিসোর্টে প্রতিদিন হাজার অসংখ্য মানুষ আসে। এদের নিয়ে আসা বাস, মাইক্রোবাস, মিনিবাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চস্বরণে হর্ণ বাজায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের৷ শুধু হর্ণই নয় প্রত্যেকটি বাসেই থাকে সাউন্ডবক্স অথবা মাইক। উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে তারা জানান দেন তাদের আগমনবার্তা।
আর ক্যাম্পাসের সম্মুখভাগের রাস্তায় কোনো গতিরোধক না থাকায় গাড়িগুলোর গতিও থাকে বেপরোয়া।
এসব ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বোরহান আহম্মেদ বলেন, ‘দেশের আইনে শব্দদূষণ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও আইন থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিকনিক বাসগুলোর এই শব্দদূষণ দেখার যেনো কেউ নেই। আমরা এসবের আওয়াজে অতিষ্ট৷ আবার কোনো গতিরোধক না থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে যে কোনো সময়।’
অভিযোগ আছে পিকনিক স্পটগুলোতে সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা আবার কখনো কখনো রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান ও ডিজে বাজানো হয়। এসব স্পটগুলো বেশিরভাগ পাহাড়ের চূড়ায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় এর আওয়াজ দূ্ষিত করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘শুক্র, শনিবার বা ছুটির দিনগুলোতে হলে থাকা যায়না আওয়াজে। চারপাশ থেকে উচ্চস্বরে গানের আওয়াজে পড়াশোনার পরিবেশ থাকেনা। সারাদিন ডিজে আর হর্ণ শুনি পড়বো কখন? আবার কখনো কখনো খোলার দিনে দেখা যায় আমরা ক্লাস করছি বা পরীক্ষা দিচ্ছি অথচ পাশেই কোনো এক পিকনিক স্পটে বিকট আওয়াজে গান বাজছে।’
শুধু তাই নয়, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মেহমান পরিচয়ে এসব পর্যটকবাহী বাসের পার্কিং এর স্থান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, খোলার দিনে একটু শিথিল থাকলেও বন্ধের দিনে পর্যটকেরা শুধু আসছেন ই না তারা ব্যবহার করছেন মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনারে উঠছেন জুতো পায়ে সেলফি তোলার জন্য।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম রহমান আসিফ বলেন, ‘গত শনিবার দেখলাম মুক্তঞ্চে একদল পর্যটক সাউন্ডসিস্টেম লাগিয়ে নাচগান করছেন। ক্যাম্পাসের ক্লাস না হোক হলে তো শিক্ষার্থী আছে। এসব আওয়াজের মাঝে পড়াশোনা করা বা স্বাভাবিক দিন কাটানো যায়না। তারা মুক্তমঞ্চে খাওয়া দাওয়া করছেন। এছাড়া যেখানে ক্যাম্পাস ধূমপানমুক্ত সেখানে পর্যটকেরা এসে দেদারসে ধূমপান করছেন।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো দিন ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনার।
বিভিন্ন কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী নেতাদের পরিচয়ে বাস পার্কিং এর ব্যাপারটি স্বীকার করে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে পর্যটকদের এসব কর্মকান্ডের ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে মানুষ আসবেই তাই আমরা ঢোকার অনুমতি দেই। কিন্তু যানবাহনের ব্যাপারে আমরা দিতে চাইনা। তবে বিভিন্ন সময়ে আমাদের নিজেদের শিক্ষক-কর্মকর্তা বা শিক্কার্থী নেতাদের অনুরোধে অনুমতি দিয়ে থাকি। তবে এভাবে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে আনন্দ করার অনুমতি আমরা দেইনি।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগসমূহ এবং পিকনিক স্পটগুলোর উচ্চ আওয়াজ ও বাসগুলোর আওয়াজ নিয়ন্ত্রন নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘পার্কগুলোর ব্যাপারে জেলা প্রশাসন দেখার কথা। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতার বাইরে। তবে আমরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আর সিটি কর্পোরেশন এর সাথে কথা বলে সামনের রাস্তায় গতিরোধকের ব্যবস্থা করবো।’
ক্যাম্পাসে পার্কিং এর ব্যাপারে তিনি জানান, ‘এটা তো বিশ্ববিদ্যালয় কেউ আসতে চাইলে অনুমতি দিতে হয়। আমরাও তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যাই। তবে পরিবেশ যেনো নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের নজর থাকবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো। উচ্চশব্দে যেনো গান না বাজে সেজন্য আমরা মোবাইল কোর্ট পাঠাবো।’