ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডটিতে শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চান কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

Loading

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডটিতে শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চান কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

পরিকল্পিত সর্বাধুনিক মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন তারা। ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যায়ামাগার ও পাঠাগার নির্মাণ, নিরাপত্তা জোরদার, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা। নির্বাচন কমিশন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ওয়ার্ডটিতে নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।

নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানান প্রায় সব প্রার্থী। নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি জয় নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দলীয় সমর্থন নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডটি অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন। ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায় অবস্থিত এ ওয়ার্ডটি ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনের অন্তর্গত এলাকা।

ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, উত্তর ও দক্ষিণ সায়েদাবাদ, বিবির বাগিচা, বৌবাজার সুতি খালপাড়সহ ৩০টি পাড়া মহল্লা নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠিত। লক্ষাধিক মানুষ বসবাসকারী ওয়ার্ডটির ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার ৪শ’ ২৫ জন। ডিএসসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হলেন বর্তমান কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু আর বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হলেন, মো. আবদুল কাদের। এছাড়া স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে জাহিদ হোসেন জুয়েল ও জাহিদুল কবীর রাজু (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানাধীন ডিএসসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ সরু অলিগলিতে ঠাসা। রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় ময়লার স্তূপ। মশা-মাছিসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ এলাকাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। এখানকার অপরিকল্পিত ও অপ্রশস্ত রাস্তাঘাটে তেমন একটা পরিকল্পিত স্যুয়ারেজের ব্যবস্থা নেই।

বাণিজ্যিক ও বাস টার্মিনাল হওয়ায় সড়কে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা লেগেই থাকে। সরু গলিতে আবাসিক বাড়ি নিয়ে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর ছোট ও মাঝারি কারখানা গড়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কে জলাবদ্ধতা হয়। এ ওয়ার্ডে ডিএসসিসির কোনো কমিউনিটি সেন্টার, মাতৃসদন, ব্যায়ামাগার, খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক না থাকায় সমস্যায় রয়েছে বাসিন্দারা। কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় নিুবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদি পালন করতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ওয়ার্ডটিতে মাদকের আনাগোনা খুবই বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।

বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবুল কালাম অনু যুগান্তরকে বলেন, আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ডে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা সংস্কার কাজ, স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, সড়ক বাতি স্থাপনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টার ও খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া মাদক নির্মূলে কাজ করেছি। আমার বিগত দিনের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে দল থেকে আবারও মনোনয়ন পেয়েছি। আশা করি ভোটাররাও আমার বিগত ৫ বছরের কর্মকাণ্ডে মূল্যায়ন করবে। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবেন বলে জানান তিনি।

বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানে আমি আন্তরিকভাবে কাজ করব। ওয়ার্ডে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ হোসেন জুয়েল। যুগান্তরকে বলেন, এ ওয়ার্ডে আমি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কখনও মূল্যায়ন পাইনি। এ বছর আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার আশ্বস্ত করায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করেছি। কিন্তু আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা তৃণমূলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এজন্য আমার কর্মী ও ভোটারদের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডটিকে পরিকল্পিত ও আধুনিক বাসযোগ্য করে গড়ে তুলব। তাছাড়া কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, শিশুপার্ক, হাসপাতাল নির্মাণ করব। এছাড়া এলাকাটি সবুজায়ন করা ও তরুণ সমাজকে খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করব।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ৪৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল কবীর রাজু যুগান্তরকে বলেন, আমরা দলের ত্যাগী নেতা হয়েও মূল্যায়ন পাইনি। এজন্য ভোটারদের অনুরোধে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচিত হলে মাদক নির্মূলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করব। শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, এলাকাবাসীর সামাজিক প্রোগ্রামের জন্য কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করব। জলাবদ্ধতা নিরসন ও শহীদ জিয়া স্কুলের সামনে জমে থাকা ময়লা পানি অপসারণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
সূত্র : দৈনিক যুগান্তর