রাণীশংকৈল মহলবাড়িতে ৩ দিনব্যাপী সত্যপীরের মানত গানের সমাপ্তি ।
হুমায়ুন কবির রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার পৌরশহরের মহলবাড়ী গ্রামে ৩ দিন ব্যাপী মানতকরা সত্যপীরের গানের আসর ২১ অক্টোবর গভীর রাতে শেষ হয়। সংসারে শান্তি ফিরে আসবে বলে এ গানের মানত করে আয়োজন করি বলে জানান আসমা বেগম।
এ গানে পুরুষেরা নারী সেজে, পড়নে রঙ্গিন শাড়ী, কোপালে টিপ, খোপায় ফুল, ঠোটে লিপস্টিক মেখে অভিনয় ও থুরকি নৃত্যে দর্শকদের আনন্দ দেন এবং রঙ্গ রশিকতার মাধ্যমে তুলে ধরেন সত্যপীরের জীবনী ও বিভিন্ন কাহিনীর পালাগান চলে রাতভর। গান চালাতে তাদের দলে রয়েছেন ১৬ জন সদস্য। গানের দলনেতা (গাইন) উচ্চ শিক্ষিত স্কুল শিক্ষক কলেন রায় গায়েবীভাবে (স্বপ্নে) সত্যপীরের ভক্ত হয়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন ।
গানের আয়োজক বাজেবকসা গ্রামের আসমা বেগম বলেন আমার শাশুড়ি এ পীরকে মেনে চলছিল, আমরা না মানায় আমার স্বামী মারা গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি। পর্যায়ক্রমে আমার সন্তানের ৫টি সন্তান মারা যায়, গাই গরুর দুধে লবণ বের হয় এমনিভাবে বাড়ীর সকল সদস্যদের উপর অশান্তি নেমে আসে। নিরুপায় হয়ে সত্যপীরের উদ্দেশ্যে ৩ দিনের গান মানত করলে সংসারের শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু নিজ এলাকায় গান পরিচালনা করতে বাঁধা দেয় আমজুয়ান- বাজেবকসা গ্রামের একাদশ খলীফার অনুসারীরা। ফলে মহল বাড়ী এলাকায় গিয়ে ননদের বাড়ীতে গান পরিচালনা করতে আসি।
এ প্রসঙ্গে দলনেতা (গাইন) কলেন রায় বলেন সত্যপীরের গান সকল ধর্মের মানুষ মানত করে থাকে, প্রথমত পীরের উদ্দেশ্যে মিলাদ মহফিল ও ২টি রোজা পালন করা হয়। মনের বাসনা পূরণ হলে ৩ দিন ৫ দিন অথবা ৭ দিনের জন্য মানত অনুযায়ী গান পরিচালিত হয় যা সম্পূর্ণ কিতাব থেকে পরিচালিত হয়।
তিনি আরো বলেন গান হলো মানুষের মনের খোরাক একটি বিনোদন মাত্র। সত্যপীরের মাজারটি বগুড়া মহাস্থানগড়ের পাহাড়পুর নামক স্থানে অবস্থিত। এ মাজারে সব সময় মানুষ দুধ কলা ও মিলাদ মহফিল করে মনের বাসনা পূরণ করে আসছেন।
সত্যপীরের গান প্রসঙ্গে বড় মসজিদের খতিব মাও, আব্দুল জব্বার বলেন এ গানটি কোরআন হাদিসের আলোকে বৈধ নয় এটি কাল্পনিক ও কুসংস্কার মাত্র।
এপ্রসঙ্গে বনগাঁও দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র মাওলানা মতিউর রহমান বলেন এগানের মানত ইসলামের দৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ শেরেক।
প্রসঙ্গত: মধ্যযুগ থেকেই বাংলা সমাজে সত্যপীর মনিকাপীরদের একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ছিল। জন সমাজে এরা দেবতা হিসেবে পুজিত হয়ে আসছেন। ঐতিহাসিকবিদ ও সমাজ সমালোচকদের অনেকে মনে করেন মধ্যযুগে হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক লেনদেনের মাধ্যমে এদের উদ্ভব।
একারনে তাদের সংমিশ্রন দেবতা বলে অবহিত করা হয়। স্থানীয়রা মনে করেন আগে এগানের প্রচলন বেশছিল কিন্তু বর্তমানে এ সত্যপীরের গান প্রায় বিলুপ্তির পথে।