আজমেরী গ্লোরীর এক বাস চালক মাদকাসক্ত, অন্যজন হেলপার-

Loading

রাজধানীর মগবাজার মোড়ে বাস দুর্ঘটনায় এক কিশোর নিহতের ঘটনায় ওই দুই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাব জানিয়েছে, বাস দুটি ছিল আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের। তবে বাসচালকদের মধ্যে একটি বাসের চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও আরেক বাসের ড্রাইভিং সিটে ছিলেন বাসের হেলপার। মূল চালকের অনুপস্থিতিতে তিনি বাসটি চালাচ্ছিলেন। তার বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার মঈন জানান, দুর্ঘটনার পর বাসের চালকেরা বাস রেখে পালিয়ে যায়। নিহতের পরিবার ওই দিনই রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর র‍্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরপর র‍্যাব-৩ এর একটি দল গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকা এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা থেকে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুই বাসের চালক মো. মনির হোসেন (২৭) ও মো. ইমরানকে (৩৪) গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজনই ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মনির হোসেন (২৭) জানিয়েছেন, এর আগে তিনি ৫ বছর মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিলেন। তিন মাস আগে তিনি বাংলাদেশে তার নিজ গ্রামের বাড়ি ভোলাতে আসেন। প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকাতে কর্মসংস্থানের জন্য আসেন। প্রায় এক মাস আগে থেকে আজমেরী গ্লোরী গাড়ির চালকের সঙ্গে ওই গাড়িতে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা মজুরিতে সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে মাঝে মধ্যে বাসটি তিনি নিজেও চালাতেন।

গত ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের বাসটি সদরঘাট থেকে গাজীপুর চন্দ্রার উদ্দেশে গাড়ির মূল চালক চালিয়ে নিয়ে আসেন। পথিমধ্যে চালক সুমন গুলিস্তানে এসে গাড়িটি হেলপার মনির হোসেনের দায়িত্বে দিয়ে যান। মনির গাড়িটি চালিয়ে মগবাজার মোড়ে নিয়ে আসেন।

মগবাজার মোড়ের সিগন্যাল ছেড়ে দিলে দ্রুত গাড়ি দুটি এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী স্টপেজে যে আগে পৌঁছাতে পারবে সে বাসের জন্য অপেক্ষারত বেশি সংখ্যক যাত্রীদের তার বাসে নিতে পারবেন। এমতাবস্থায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এক গাড়ি অপর গাড়িটিকে ওভারটেক করার সময় দুই গাড়ির মাঝখানে চাপা পড়ে ওই কিশোর। ঘটনার পরপরই দুই চালক মনির হোসেন ও ইমরান হোসেন বাস দুটি রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইমরান হোসেন (৩৪) জানিয়েছেন, তিনি ১০-১২ বছর যাবৎ আজমেরী গ্লোরী নামক কোম্পানির বাস চালিয়ে আসছেন। দুর্ঘটনার শিকার বাসটি তিনি দুই বছর ধরে চালাচ্ছেন। যদিও তিনি এক সময় হেলপার ছিলেন। ৩ বছর আগে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন।

বাসটির মালিকের কাছ থেকে দৈনিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন। গত ২০ জানুয়ারি ৪টার দিকে যথারীতি বাসটি নিয়ে সদরঘাট থেকে গাজীপুর চন্দ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মগবাজারে আসার পর দুর্ঘটনা ঘটে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ইমরান মাদকাসক্ত। তার বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির কারণে ২০২১ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, সম্প্রতি আন্তজেলা গণপরিবহনের চেয়ে ঢাকায় চলাচলকারী বাসেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এর আগে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর দুর্ঘটনার দায়ী চালক হেলপারদের র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাতে স্পষ্ট হয়েছে যে, চালক-হেলপারদের প্রতিযোগিতামূলক ও বেপরোয়া মানসিকতার কারণে এবং চুক্তিভিত্তিক বাস চালানোর কারণে অর্থলোভে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মালিক চালক হেলপারদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও সাবধান ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

গত ২০ জানুয়ারি আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুটি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে মাঝে চাপা পড়ে এক কিশোর নিহত হয়। সে মাস্ক বিক্রি করত।