কক্সবাজার সৈকতের জনসমুদ্রে হারানো ৬ শিশুকে খুঁজে দিল পুলিশ
কক্সবাজার প্রতিনিধি ঃ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের নোনাজলে মেতেছিলেন ভ্রমণপিপাসুরা। কী নোনাজল কী বালিয়াড়ি, ৩ কিলোমিটার সাগরতীর জুড়ে কানায় কানায় মানুষ। সবখানে বিরাজ করছে আনন্দ-উৎসব। তবে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে সৈকতের লাইফগার্ড কর্মীরা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়; শান্ত সাগরে ঢেউয়ের গর্জন, তার মাঝে মানুষের উল্লাস। নোনাজলে সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি টিউবে গা ভাসিয়ে মেতে ওঠা। আর মাঝে মাঝে জেড স্কী করে সমুদ্রের নীল জলরাশি দেখতে ছুটে যাওয়া।
এ তো গেল নোনাজলে মানুষের আনন্দ উৎসব। বালিয়াড়িতেও রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সুন্দর মুহূর্তটুকু ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ঘুরছেন ঘোড়ার পিঠে কিংবা বিচ বাইকে।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক ইব্রাহীম বলেন, শুক্রবার তো অনেক মানুষ। সাগরতীরে হাঁটার মতোও সুযোগ হচ্ছে না। তবে অনেক পর্যটক হওয়াতে বেশ আনন্দ হচ্ছে আর ভালো লাগছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক রুপা হায়দার বলেন, ‘কর্মব্যস্ত জীবনে সব সময় কক্সবাজার আসা হয়ে ওঠে না। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে দুদিনের জন্য কক্সবাজার আসা। কক্সবাজার আসা হয় মূলত মানসিক প্রশান্তির জন্য।’
আরেক পর্যটক রোহান বলেন, ‘শীতকাল চলছে তাই কক্সবাজার ছুটে আসা। এখানে ঘোড়ার পিঠে, বিচ বাইক ও জেড স্কীতে চড়তে এবং ছবি তুলতে বেশ ভালো লাগছে।’পর্যটকের ভিড়ের মাঝে ঘটছে শিশু নিখোঁজের ঘটনাও। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় হারিয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধার করে হস্তান্তর করা হচ্ছে অভিভাবকদের কাছে।
পর্যটক রফিক আহমেদ বলেন, ‘৬ বছরের ছেলেকে তার মায়ের হাতে দিয়ে গোসলে নেমেছিলাম। কিন্তু তার মায়ের হাত থেকে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে অনেক পর ছেলেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সে অভিযোগ দিতে এসে পেয়েছি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে আসা শিশু সাবিহা (৭), টাঙ্গাইল কাজীপুরের আনিসা অরিন (৭), চট্টগ্রাম ডাবলমুরিংয়ের বিনয়(১১), জিবরান (১১), ঢাকা মোহাম্মাদপুরের আয়েশা সিদ্দিকা (১২) ও শিশু আরাফ (৫) হারিয়ে যায়। পরে তাদের অভিভাবকদের খুঁজে বের করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। হারানো সন্তানদের ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করেন তাদের অভিভাবকরা। তারা ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
কক্সবাজার রিজিয়নের ট্যুরিস্ট পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, ঘুরতে এসে বিচে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরাও অত্যন্ত খুশি। ছুটির দিনে অধিক পর্যটকের আগমনে আমরাও সচেষ্ট হয়ে কাজ করছি। তবে এখন পর্যটকদেরও সচেতনতার সঙ্গে বাচ্চাদের সঙ্গে রেখে চলাচল করতে হবে। পর্যটকদের সেবায় সর্বদাই আমরা সব ইতিবাচক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকব। এদিকে শীত মৌসুমে হঠাৎ করে সাগরে বেড়েছে ঢেউয়ের তীব্রতা। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় সজাগ রয়েছে লাইফ গার্ড কর্মীরা।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘প্রচুর পর্যটক। সৈকতের শৈবাল থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যার মধ্যে বেশিভাগই পর্যটক সমুদ্রস্নান করছে। তবে সাগরের ঢেউয়ের তীব্রতা বেশি থাকায় পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে সতর্ক রয়েছি। টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ, বালিয়াড়ি টহল ও বোট নিয়ে সাগরের নোনাজলে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।’
এদিকে বঙ্গোপসাগর হয়ে প্রতিদিনই কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে পর্যটকবাহী ৫টি জাহাজ।