কাঁঠালিয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী সন্তানের ওয়ারিশ দাবি করে আদালতে মামলা

Loading

সৈয়দ রুবেল, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় উপজেলার আলতাফ হোসেন (৬০) নামে এক নিখোঁজ ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে আদালতে সম্পত্তির ওয়ারিশ দাবি করে বন্টনের মোকদ্দমা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে।

উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের তালগাছিয়া গ্রামে এ ঘটনায় প্রায় ৯২ জন অসহায় মানুষ তাঁদের জমি নিয়ে মা-ছেলের দ্বারা অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

কাঁঠালিয়া সহকারি জজ আদালতে ২০১১ সালের মার্চ মাসে নিখোঁজ আলতাফ হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫০) ও ছেলে শহিদুল হোসেন রিপন (৩০) প্রায় ৪ একর সম্পতির আট আনা অংশের ওয়ারিশ দাবি করে তালগাছিয়া গ্রামের আবদুস সত্তার গংদের বিবাদী করে একটি বন্টনের মোকদ্দমা দায়ের করেন। এতে ৯২জন সাধারণ মানুষকে বিবাদী করা হয়।

আলতাফকে মৃত দেখিয়ে মা-ছেলে ওয়ারিশ দাবি করে মিথ্যা বন্টনের মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। মিথ্যা আশ্রয় নেয়ার অপরাধে মা-ছেলেকে ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিকেরা।

মামলার নথি ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায় , কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া মৌজায় রেভেনিউ সার্ভে নং-৩২৩১ , জেল এল নং-৩৫ , সিএস খেবট নং-৬৫ এবং ৩৭৮ নং খতিয়ানের সাবেক দাগ ১৮৮১, ২০৭২, ১১৩২, ১৪১১, ১৪২৮, ১৪২৯, ১৪৩২, ১৪৪৭, দাগে ৪.০৪ একর সম্পত্তি নিয়ে ২০১১ সালের ৩ মার্চ মোকাদ্দমাটি দায়ের করেন সুফিয়া বেগম ও তাঁর ছেলে শহিদুল হোসেন রিপন। আলতাফ হোসেন দীর্ঘ দিন হাজতবাস ও নিরুদ্দেশ থাকার পরে ২০১১ সালে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি একমাস বাড়িতে অবস্থান করেন। একদিন তাঁর ছেলে রিপন বাবা আলতাফ হোসেনকে মারধর করে বাড়িতে শিকল দিয়ে বেধে রাখে। এর পরের দিন মা ছেলে প্রচার করতে থাকেন আলতাফ হোসেন শিকল ছিড়ে রিপনের স্ত্রীর সোনা গহনা চুরি করে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।

এলাকাবসির অভিযোগ, আলতাফ হোসেনের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই মা-ছেলে তাঁকে মৃত ব্যক্তি দেখিয়ে আদালতে ভুয়া ওয়ারিশ সেজে মিথ্যা বন্টনের মামলা করে মানুষকে হয়রানি করছেন।

এ বিষয়ে মধ্য তালগাছিয়া গ্রামের নাসির হাওলাদার (৪৫) বলেন , আলতাফ দীর্ঘ দিন কারাভোগ করে বাড়িতে আসেন। একদিন বড় ছেলে রিপন তাঁকে বাড়ির সামনের ব্রীজের ওপর থেকে মারধর করে বাড়িতে এনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। পরের দিন সকালে আলতফের স্ত্রী প্রচার করতে থাকেন , আলতাফ তাঁর ছেলে বউয়ের সোনা গহনা চুরি করে শিকল ছিড়ে পালিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন , তবে সে ভালো মানুষ ছিল। তাঁর মাথায় কোন সমস্যা নাই।

একই গ্রামের আবদুল মোতালেব (৬৯) বলেন , আলতাফ এক রাইতের মধ্যে কি অইয়া গেছে হেইয়াই কইতে পারিনা।

সোনারবাংলা গ্রামের আবদুল মোতালেব (৭৫) বলেন , আলতাফ বাড়িতে আসার পরে আমি তাঁকে প্রশ্ন করি তুই নাকি মারা গেছ? সে আমার কথা শুনে হাসতে থাকে। সে নিরুদ্দেশ হবার দিন সকালে তাঁর ছেলে রিপন আমার বাড়িতে এসে জানায় আব্বায় আমার স্ত্রীর সোনা গহনা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আলতাফ হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন , ৩০ বছর সে বাড়ি ছেড়ে কোথায় গিয়েছিল তা আমি জানিনা । এরপরে সে ২০১১ সালে বাড়িতে এসে ৮ দিন ছিল। সব মামলায় আমার বিবাদীরা আমার স্বামীকে মৃত দেখাইছে। তিনিটি সিভিল মামলায় পর্যন্ত তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। সরকারি কেসেই যদি মৃত্যু দেখায় তবে আমি কি করবো। সে কোথায় আছে আমি তা জানিনা।

এ বিষয়ে শৌলজালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদ হোসেন রিপন বলেন , অমি আলতাফ হোসেনের কোন মৃত্যুর সনদ দেইনি। তবে মামলায় নিরুদ্দেশ ব্যক্তিকে মৃত দেখানো ঠিক হয়নি।