বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে স্বর্ণের দাম যে কোনো সময় প্রতি আউন্স ৩ হাজার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। এদিকে রুপা, কপার ও প্লাটিনামের দামেও লেগেছে দাম বাড়তির হাওয়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক পরিকল্পনার ফলে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত মূল্যবান ধাতুটির প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করেছেন। এতে শুক্রবার (২৮ মার্চ) স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪ দশমিক ৩১ ডলারে। যা দিনের শুরুতে পৌঁছেছিল রেকর্ড ৩ হাজার ৭৭ দশমিক ৪৪ ডলারে। আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৮৪ দশমিক ৭০ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।
ক্যাপিটাল ডটকমের আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডা বলেন, মার্কিন বাণিজ্য-রাজস্ব নীতি, ফেডের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ও চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। খুব শিগগিরই এটি ৩ হাজার ১০০ ডলার প্রতি আউন্স ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। ইতোমধ্যেই দেশে স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চে। সবশেষ গত ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৫৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বমুখীতায় বেচকেনা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুরঞ্জন বলেন, ‘ব্র্যান্ডের বড় বড় দোকানগুলোর বিক্রিও সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে। আর মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা তো আরও করুণ। ঊর্ধ্বমুখী এই দাম পুরো স্বর্ণ ব্যবসার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী তপন পাল বলেন, ‘উচ্চমূল্যের কারণে এবার ঈদে স্বর্ণের বেচাকেনা নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। খুব উচ্চবিত্ত যারা, তারা শখ পূরণের জন্য কেনাকাটা করছেন, তাও সামান্য। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ কমেছে বেচাকেনা।’
আর ক্রেতারা বলছেন, স্বর্ণের দাম ক্রমেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। অনিমা পাল নামে এক ক্রেতা বলেন, স্বর্ণকে দুঃসময়ের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে স্বর্ণ কেনাই দুরূহ হয়ে পড়ছে।
এদিকে, ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য, গত এক মাসে ৮ দশমিক দুই আট শতাংশ দাম বেড়েছে রুপার। বর্তমানে প্রতি ট্রয় আউন্স বিক্রি হচ্ছে ৩৪ দশমিক ৩৬ ডলারে।
প্লাটিনামের দামও বেড়েছে কিছুটা। এক মাসে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি ট্রয় আউন্স এই ধাতু বিক্রি হচ্ছে ৯৮৭ ডলারে। সবচেয়ে বেশি এক মাসে প্রায় ১০ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি পাউন্ড কপার বিক্রি হচ্ছে ৫ দশমিক ০৮ ডলারে।