পোল্ট্রি ফার্ম ও বিষ্টার স্তুপ দুর্গন্ধ সইতে না পেরে-বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হলেন শ্রীপুরের মমতাজ বেগম
মাগুরা প্রতিনিধিঃ অনেক সাধ করে বাড়ি করেছিলেন মমতাজ বেগম। স্বপ্ন ছিল স্বামী-সন্তান নিয়ে গাছ-পালা ঘেরা, ছায়া ঢাকা,পাখি ডাকা বাড়িতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবেন।
কিন্তু তার সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। বাড়ি তৈরীর আট-দশ বছর পর গত প্রায় দু’বছর পূর্বে তার বাড়ির কোল ঘেষে দুই পাশ জুড়ে তিনটি বিশাল পোলট্রি ফার্ম গড়ে তোলে প্রতিবেশী অনিক মোল্ল্যা।
শুধু তাই নয় মমতাজ বেগমের বসত ঘরের একেবারেই কোল ঘেষে ডোবা কেটে সেখানে ফেলতে শুরু করে পোলট্রি ফার্মের বর্জ্য ও মুরগির বিষ্টা । ফলে বর্জ্য, মুরগির বিষ্টার অসহনীয় দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উপদ্রব সইতে না পেরে অবশেষে সাধের বাড়িঘর ফেলে আশ্রয় নিলেন মদনপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে ।
বিষয়টি নিয়ে এলাকার ভূক্তভোগি মহল ও মমতাজ বেগম একাধীকবার স্থানীয় প্রশাসনের দারস্থ হয়েও কোন ফল পাননি বলে অভিযোগ করেন। ঘটনাটি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৭নং সব্দালপুর ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের। এই গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি আছাদুল মোল্ল্যার পুত্র অনিক মোল্ল্যা এই ফার্ম গুলির মালিক।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জনবসতি এলাকায় পোলট্রি ফার্মের মালিক অনিক মোল্ল্যা প্রতিবেশী মমতাজ বেগমের ঘরের পাশেই ডোবা কেটে সেখানে ফার্মের বজ্য ও মুরগির বিষ্টা ফেলে স্তুপাকৃতি অবস্থায় রেখেছে। ভূক্তভোগী মমতাজ বেগম বলেন, ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দিলেও বিষ্টার দুর্গন্ধে পেট ফুলে দম বন্ধ হয়ে আসে। বিশেষ করে দুপুর বেলা প্রখর রোদে এই দুর্গন্ধ বেশি ছড়ায়। এভাবে দিনের পর দিন দুর্গন্ধের নিঃশ্বাস গ্রহন করতে করতে স্কুল,কলেজ পড়–য়া ছেলে ও মেয়ে শ্বাস কষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে। তিনি আরোও বলেন, স্বামী বিজিবি’তে চাকরি করেন এবং ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু ছেলে-মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বাবার বাড়িতে গিয়ে বসবাস করছেন। মমতাজ বেগম প্রায় ছয় মাস পূর্বে এঘটনার প্রতিকার চেয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বার্হী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এরপর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার সরেজমিন পরিদর্শন করলেও এর কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান। গ্রামবাসিও একত্রিত হয়ে আরেকটি আবেদন করেছিলেন কিন্ত এরও কোন প্রতিকার হয়নি। এবিষয়ে মমতাজ বেগমের স্বামী মহিদুল ইসলাম বলেন, ফার্ম অপসারনের জন্য আবেদন করায় অনিক মোল্ল্যা ক্ষিপ্ত হয়ে তার প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যমানের গাছ কেটে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রীপুর থানায় জিডিও করা হয়েছিল কিন্তু কোন উপকার পাননি বলে জানান। এছাড়াও পোল্ট্রি ফার্ম অপসারনের জন্য আবেদন করায় তাকে এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইয়াসিন কবীর বলেন,মমতাজ বেগম ও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে । তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ফার্ম মালিককে সতর্ক ও জনস্বার্থে ফার্মের সকল সমস্যা সমাধানের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । এ নির্দেশের পেক্ষিতে ফার্ম মালিক অনিক মোল্লা ছয় মাসের মধ্যে ফার্মের বর্জ্য অপসারণসহ সকল প্রকার সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেছিল । কিন্ত অঙ্গীকারের সময়সিমা পার হয়ে গেলেও তিনি যদি এবিষয়ে কোন সু-ব্যবস্থা গ্রহন না করে থাকেন তাহলে এমতাবস্থায় ফার্মগুলি পুনরায় পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
ফার্ম মালিক অনিক মোল্লা অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,পাড়া গায়ে গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আশেপাশে ফার্ম নির্মান করায় এবং মুরগি ফার্মের বর্জ্যরে দূগর্ন্ধে এলাকাবাসির বেশ ক্ষতি হচ্ছে সঠিক । তবে যতদ্রুুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করে দিবেন বলে জানান।