প্রধানমন্ত্রী বরাবর নিসচা’ ধামরাই শাখার স্মারকলিপি প্রদান

Loading

মোঃ সম্রাট আলাউদ্দিন,ধামরাই(ঢাকা)থেকেঃ- সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা’র) ধামরাই উপজেলা শাখা।

সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত স্বারকলিপিটি ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকীর কাছে তুলে দেন নিসচা’র ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি এম. নাহিদ মিয়া।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নিসচা’র ধামরাই শাখার অর্থ সম্পাদক আব্দুল আলিম, সড়ক দুর্ঘটনা অনুসন্ধান বিষয়ক সম্পাদক এস এম রাশেদ হাসান, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কষ্ট আহমেদ, কার্যকারী সদস্য তানভির ও সাইফুল ইসলাম।

স্বারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) দেশব্যাপী
সড়ক দুর্ঘটনারোধে সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দেশ ও বিদেশের ১২০টি শাখার স্বেচ্ছাসেবী সড়ক যোদ্ধারা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সড়ককে নিরাপদ করার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ আপনি ( প্রধানমন্ত্রী) ২২ অক্টোবর মরহুমা জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর দিনটিকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আপনার এই মহানুভবতায় আমরা কৃতজ্ঞ।

যে সমস্ত কারণে মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যদিও ৮ম স্থানে রয়েছে এবং এর ভয়াবহতা এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যা অচিরেই ৩য় স্থানে নেমে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০১৮ এর তথ্যমতে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দশ লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে যার ৯০ ভাগ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে ঘটে থাকে। উন্নতমানের দেশসমূহের
তুলনায় এটি ৩ গুণ বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতিবছর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার, পাকিস্থানে ২৭ হাজার এবং ভারতে ৩ লক্ষ। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ৩.৬ অর্জনের নিমিত্তে ২০৩০ সালের মধ্যে মৃত্যুর হার ৫০% কমিয়ে আনা এবং সে নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিটি দেশকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও লক্ষমাত্রা ১১.২ এ রাস্তাকে সহজ, ব্যবহারযোগ্য এবং টেকসই যাতায়াত ব্যবস্থা সকলের জন্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন দীর্ঘদিনের পথপরিক্রমায় সড়ক দূর্ঘটনারোধে আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে দাবী জানিয়ে আসছি তার
মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন তৈরি ও তা বাস্তবায়ন করা। এর প্রেক্ষিতে আপনার উদ্যোগে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণীত হয়, জনগণের মধ্যে স্বস্থি ফেরত আসে কিন্তু এই আইনটি আপনার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ আইনটির বিধিমালা প্রণয়ন হয়নি।

যার ফলে মূলত আইনটি অকার্যকর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীসহ কেউই কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম ৫টি পিলার যথাক্রমে ১. সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, ২. ঝুঁকিমুক্ত যানবাহন, ৩. সচেতন সড়ক ব্যবহারকারী, ৪. সড়ক দুর্ঘটনায় পরবর্তী করণীয়, ৫. গাড়ি চালনার উপযুক্ত পরিবেশ বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না।

কারণ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য জাতিসংঘের ৫টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এই ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ১. গতি (ঝঢ়ববফ) ২. হেলমেট (ঐবষসবঃ) ৩. সিটবেল্ট (ঝবধঃনবষঃ) ৪. মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালনা (উৎরহশ উৎরারহম) ও ৫. শিশু আসন (ঈযরষফ ঈধৎ জবংঃৎধরহঃং) । এই ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য। ডোপ টেস্টের সঠিক ব্যবহার ও মনিটরিং না থাকায় এখনও অনেক চালক মদ্যপান ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ী চালাচ্ছে এবং আমাদের দেশে শিশুদের জীবন রক্ষার্থে শিশু আসনের কোন বিধান সড়ক পরিবহন
আইন ২০১৮-তে উল্লেখ নেই।

এছাড়া সড়ক পরিবহন আইন পুরোপুরি প্রয়োগে আমরা মনে করি বিআরটিএ’র কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে হবে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ করে ট্রাফিক বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, চালক, মালিক, পথচারী ও যাত্রীদের আইন সম্পর্কে জানাতে প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ও সড়ক ব্যবহারকারী
সকলকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তুলতে বিশেষ কর্মশালার গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি বিষয় সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালায় অন্তর্ভূক্ত অথবা আপনার জোরালো নির্দেশনার দাাাবি জানাচ্ছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি উদ্যোগ গ্রহণ করলে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ উপরোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে বিধিমালা প্রণয়ন ও অনুমোদন করলে এবং সে অনুযায়ী প্রশাসন
ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল কাজ করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। যার ফলে ঝউএ-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।