প্রচ্ছদ ছবি বিজয়ের মাসে স্বীকৃতি ছাড়াই চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোবান

বিজয়ের মাসে স্বীকৃতি ছাড়াই চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোবান

Loading

মোঃ সম্রাট আলাউদ্দিন, ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ- রাজনীতির উত্তাল সময় ১৯৬৯-৭১ এ ছাত্র ইউনিয়নের প্যানেল থেকে বিপুল ভোটে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

যুদ্ধ শুরু হলে সংগঠক হিসেবে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও দৌলৎদিয়া এলাকায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। অংশ নেন সম্মুখ সমরে। নেতৃত্ব দেন থানা থেকে অস্ত্র লুটে। তবে বিজয়ের ৫০ বছরেও গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি তার। অবশেষে বিজয়ের মাসেই চলে গেছেন ঢাকার ধামরাইয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান খান লোবান।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার ধামরাই উপজেলার চৌহাট ইউনিয়নের পারাগ্রাম গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান খান লোবান দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৪ বছর। মৃত্যুকালে এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী’কে রেখে মারা গেছেন। তিনি ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন, পরে ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

স্বীকৃতি না পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধকালীন সময়ের কথা জানতে গত অক্টোবর মাসে তাকে যখন মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড উপজেলা পরিষদে ডেকেছিল। ততদিনে নিজের পায়ে চলার মতো সামর্থ হারিয়েছিলেন তিনি।

জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান খান লোবানের ছেলে আশিকুর রহমান খান বলেন, ”বাবা বেঁচে থাকতে কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন। তবে গেজেটে নাম আসেনি। অবশেষে গত অক্টোবরে সাবেক মন্ত্রী সাজাহান খান ধামরাইয়ে আসলে সেখানে আমরাও যাই। বাবার সহযোদ্ধারাও ছিলেন সেখানে। তারা বাবার বিষয়ে বিষদ বলেন। তার সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধা মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘লোবান ভাই না থাকলে তাদের মুক্তিযুদ্ধেই যাওয়া হতো না। ২৫ মার্চ রাতে খবর পেয়ে আমরা মানিকগঞ্জ অস্ত্রাগার লুট করি, সেখানে ভিপি হিসেবে বড় ভূমিকা রাখেন লোবান ভাই। পরে মানিকগঞ্জের সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের কাছ থেকে মানিকগঞ্জেই রাইফেল চালনা প্রশিক্ষণ নেই।’

আশিকুর রহমান খান আরও বলেন, ‘বাবা গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। কাল যখন তিনি মারা যান আমরা ধামরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে ফোন করি। উনি আমাকে বললেন বাবাকে গার্ড অফ অনার দেয়া হবে। পরে আজ গার্ড অফ অনার দেয়া হয়। তবে তিনি এখনো গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা, উপজেলা প্রশাসন তাকে যথাযথ সম্মান জানিয়েছে। আমরা এতে কিছুটা হলেও প্রশান্তি পেয়েছি। আশা করছি তিনি স্বীকৃতিও পাবেন।’

জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘যুদ্ধে লোবান ভাই কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ, সাটুরিয়া, হরিরামপুরে দায়িত্ব পালন করেন। মানিকগঞ্জে থাকলে হয়ত তিনি আরও অনেক আগেই স্বীকৃতি পেতেন।’

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধে তার অন্যতম সহযোদ্ধা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ২-৩ মাস আগে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা ধামরাইয়ের এমপি ও অন্যান্যদের বলেছি। তারা বলেছে এটা তারা করে দেবে। সে তো মূলত ধামরাইতে থাকেনি। লেখাপড়া, রাজনীতিসহ প্রায় সবকিছু করেছে মানিকগঞ্জে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার আবেদন করেছে ধামরাইতে।

মানিকগঞ্জে আবেদন করলে তো সমস্যা হতো না। কারণ এখানে তাকে সবাই চেনে জানে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তালিকা করতে পারতাম। ধামরাই রাজনীতি বা যুদ্ধ কোনটাই না করায় তার বিষয়ে কেউ জানতো না। একারণে গেজেটেড হয়নি। উনি উনার মতো চেষ্টা করেছে কিন্তু হয়নি। আমরা সেটা জানলাম সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হওয়ার পর। মৃত্যুর পরে হলেও তিনি দ্রুত গেজেটেড হবেন বলে আশা করছি।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীম খান সেলিম বললেন, ‘দুঃখের বিষয় এমন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া যায়নি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। দ্রুত স্বীকৃতির ব্যবস্থা করবো। আমরা খবর পেয়েই তাকে সম্মান জানাতে গার্ড অফ অনার দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

কাগজে কলমে মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে, কোন রাষ্ট্রীয় ভাতা না পেলেও অবশেষে তার মৃত্যুতে বিউগলে বেজেছে করুণ সুর। সম্মান জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা। এতেই কিছুটা হলেও মরহুমের আত্মার প্রশান্তি মিলেছে বলে মত পরিবারের।