বেনাপোল কাস্টম ২ হাজার ৫শ’ কেজি ‘ভায়াগ্রা পাউডার’ আটক করেছে ।

Loading

মোঃ রাসেল ইসলাম,বেনাপোল(যশোর)প্রতিনিধি: বেনাপোলে অবৈধভাবে ভারত থেকে আমদানি করা ২ হাজার ৫শ’ কেজি ‘ভায়াগ্রা পাউডারের’ একটি চালান আটক করেছে বেনাপোল শুল্ক কর্মকর্তারা। যার বাজার মূল্য ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিশ্ব কাস্টমস সংস্থা ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউসিও) এর ১৮২ সদস্য দেশকে মাদক, বিস্ফোরক ও এ ধরনের ক্ষতিকর পণ্য চোরাচালানের বিষয়ে দীর্ঘদিন সর্তকবার্তা দিলেও বাংলাদেশেই দ্বিতীয়বার উদঘাটিত হলো।

এ ঘটনায় বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস বেনাপোল লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (৭ই আগষ্ট) সকালে বেনাপোল কাস্টম ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, ঢাকার বায়েজিদ এন্টার প্রাইজ, ৪৭ /সি মিডফোর্ড রোড, ঢাকা নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ২ হাজার ৫শ‘ কেজি সোডিয়াম স্টার্চ গøাইকোলেট আমদানির জন্য চলতি বছরের ২১ মে ন্যাশনাল ব্যাংক বাবু বাজার শাখা ঢাকা এর একটি ঋণপত্র খোলেন (এলসি নং-৯৪৬১৯০১০৩৪২)।

পণ্য চালানটি ভারত থেকে ২৬শে মে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। যার মেনিফেস্ট নং-১৯১৯৩/১, পণ্যচালানটি খালাস নিতে ২৯ শে মে সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস বেনাপোল বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। বিল অব এন্ট্রি নং-সি-৩৬৪৯৬। আমদানি পণ্যচালানটি ধরা পড়ার কিছুদিন আগে অসাধু একটি চক্রের অবাধে আমদানিযোগ্য পণ্যের আড়ালে অপঘোষণার মাধ্যমে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে ভায়াগ্রা নিয়ে যাবে মর্মে আমাদের কাছে গোপন সংবাদ আসে। সে আলোকে সন্দেহজনক পণ্যচালানটি নজরদারিতে রাখা হয়। এরপর কাস্টম হাউসের চৌকস কর্মকর্তাদের একটি দল দিয়ে চালানটির আমদানি দলিল ও কায়িক পরীক্ষায় ২ হাজার ৫শ’ কেজি সোডিয়াম স্টার্চ গøাইকোলেট ১০০ ড্রাম সাদা পাউডার পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত পণ্যতালিকা পর্যালাচনা ও যাচাই করা হয়। রিপোর্ট নিয়ে কমিশনারের কক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পর্যালাচনা করা হয়। পরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য তোলা হয় সোডিয়াম স্টার্চ গøাইকোলেট সাদা পাউডার জাতীয় পণ্যের প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা। অধিক সতর্কতার জন্য কাস্টম হাউসের নিজস্ব অত্যাধুনিক ল্যাবে রমন স্পেক্টোমিটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষা শেষে ফ্লেভার সঠিক পাওয়া গেলেও ২ হাজার ৫শ’ কেজি সাদা পাউডার পরীক্ষায় ভায়াগ্রার উপাদান আছে বলে সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক একাধিকবার পরীক্ষা করে একই ফলাফল পেয়ে রিপোর্ট দেন। ডাব্লিউসিও প্রদত্ত রমন স্পেক্টোমিটারের পরীক্ষায় জানা যায় ভারত থেকে মুল ঘোষনার আড়ালে আমদানিকৃত আলোচ্য ভায়াগ্রা পাউডার।

অত্যন্ত স্পর্শকাতর পণ্য বিবেচনায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে নমুনা বিসিএসআইএর ও ঢাকা বুয়েট কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে পণ্যটিকে আমদানীকারকের ঘোষনা অনুয়ায়ী সোডিয়াম স্টার্চ গøাইকোলেট হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু অধিকতর টেষ্টের জন্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ২ মাস পর কুয়েট ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পরীক্ষা করে পণ্যটিকে সিলডেনাফিল সাইট্রেট (ভায়াগ্রার মূল উপাদান) হিসেবে রিপোর্ট দেয়। কুয়েটে ও ঢাকা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পরেই অপঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। মূলত বৈধ পণ্যের আড়ালে আমদানিযোগ্য পণ্য অপঘোষণা দিয়ে জরিমানা ও শুল্ককর পরিশোধের দোহাই দিয়ে কাস্টমস কর্মকতাদের বোকা বানিয়ে ভায়াগ্রা পাউডার পাচারের অপচেষ্টা করে। চালানটির আমদানিকারক ও খালাসের কাজে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

তিনি আরো জানান, বিশ্বব্যাপী মানবসমাজের নীরব ঘাতক ভায়াগ্রার পণ্য উদঘাটনে বেনাপোল কাস্টম হাউসের বিরল প্রাপ্তি ও গৌরবের। একইভাবে এমন চোরাচালান প্রতিহতকরণ বেনাপোল স্থলবন্দর ও বেনাপোলবাসীর জন্য কৃতিত্বের। ডাবিø উসিও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে। সকল সদস্য দেশ এগুলো পাচাররোধে চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ স¤প্রতি প্রথম ও দ্বিতীয়বার সাফল্য পেল। গর্বের এ উদঘাটনের বিষয়টি ডড়ৎষফ ঈঁংঃড়সং ঙৎমধহরুধঃরড়হ (ডঈঙ), জবমরড়হধষ ওহঃবষষরমবহপব খরধংরড়হ ঙভভরপব (জওখঙ), ঈঁংঃড়সং ঊহভড়ৎপবসবহঃ ঘবঃড়িৎশ (ঈঊঘ)সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অবহিত করা হবে। ডাবিøউসিও সদস্য দেশসমূহকে এ পাচার ধরণ ও কৌশল সম্পর্কে জানাবে। প্রয়োজনে অধিকতর তদন্ত করবে। বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার দিপা রাণী হালদার জানান, আমদানিকারক কোনো ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তবুও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পূর্বানূমতি ব্যতীত আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮ এর শর্ত ভঙ্গ করে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভায়াগ্রা আমদানি করেছে। চালানটি আটক করা হয়েছে।

বর্তমানে আমদানিকারক কেবল ২ হাজার ৫শ‘ কেজি সোডিয়াম স্টার্চ গøাইকোলেট ব্যতীত অন্য পণ্য দাবি করছে না। ১০০ ড্রাম (২হাজার ৫শ’ কেজি) সোডিয়াম স্টার্চ গøাইকোলেট ব্যতীত অন্যান্য পণ্যের বিষয়ে জানা নেই মর্মে পণ্যচালান খালাসের কাজে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস বেনাপোল, লিখিতভাবে জানান।

এ ব্যাপারে সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস, বেনাপোল লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জালিয়াতি ও অবৈধ পণ্য সুকৌশলে আমদানির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাবার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী ব্যবস্থা নেয়া হবে।