মান্দায় শীতের আগাম সবজিতে লাভবান কৃষক ।

Loading

আপেল মাহমুদ, নওগাঁ প্রতিনিধি : মাচায় মাচায় ঝুলছে লাউ, শিম, পটল, শসা ও করিল্যা। কোথাও আবার বেগুন, কপি, লাল শাকসহ নানা রকমের নতুন নতুন শীতের সবজিক্ষেত। এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে শস্য ভান্ডার নামে পরিচিত নওগাঁর মান্দা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে। চলতি মৌসুমে আগাম সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন অনেক কৃষক। তবে, এবছর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে অনেকে আবার পড়েছেন ক্ষতির মুখে।

চাহিদা মেটাতে অনেক গৃহিণী আবার বসতভিটায় সবজির চাষ করেছেন। বসতভিটার আশপাশে এসব সবজির চাষ করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়নি। বায়োচার ব্যবহারে স্বল্প খরচে চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের সবজি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেছেন তারা। লাভবান হওয়ায় গ্রামে গ্রামে দিনদিন বাড়ছে সবজির চাষ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫শ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেগুন ৮৫ হেক্টর, ফুলকপি ৯০ হেক্টর, বাধাকপি ৬৫ হেক্টর, মুলা ৪০ হেক্টর, শিম ৫০ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ২০ হেক্টর, ক্ষিরা ৩০ হেক্টরসহ অবশিষ্ট জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ করেছে কৃষক। এছাড়া ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু ও ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে তোড়া পেঁয়াজের।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সবজির জমি তৈরিকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেসময় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ৯৫ মিলিমিটার। এতে আগাম সবজিসহ তোড়া পেঁয়াজ ও সরিষার চাষ পিছিয়ে যায়। এ বৃষ্টিপাতের আগে যেসব কৃষক আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছিলেন তারাও পড়ের ক্ষতির মুখে।

উপজেলার মান্দা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন জানান, ‘চলতি মৌসুমে আমি ২৫ কাঠা জমিতে ফুলকপি ও বাধাকপির চাষ করেছি। ব্যয় হয়েছে ১৮-২০ হাজার টাকা। অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ফুলকপিতে পচন রোগ ধরছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওধুষ প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, ফুলকপি জমি থেকেই ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ভাল দাম পাওয়ায় এ ফসল থেকে লাভের আশা করছেন তিনি।’

এ কৃষক আরও বলেন, একবিঘা জমিতে আগাম জাতের আলুর চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারণে গাছ ভাল হয়নি। গাছের শক্তিও তুলনামুলক কম। এ ফসলে লোকসানের মুখ পড়তে পারেন বলে উল্লেখ করেন কৃষক দুলাল হোসেন। একই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম দুই বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। তার জমিতে কপির চারাগুলো সবে সতেজ হয়ে উঠছে।

উপজেলার চকভোলাই গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান ও চকদেবীরাম গ্রামের দেলবর রহমান দশ কাঠা করে তোড়া পেঁয়াজের চাষ করেছেন। পেঁয়াজের গাছগুলো ইতোমধ্যে অনেক বড় হয়ে গেছে। আর দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব তোড়া পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করা যাবে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। এসব গ্রামের মাঠে প্রচুর তোড়া পেঁয়াজের চাষ হলেও এবার অনেকটা কম হয়েছে।

এলাকার কৃষকরা জানান, এবারে তোড়া পেঁয়াজের বীজের দাম অনেক চড়া। এক বিঘা জমিতে এ মৌসুমে রোপণের জন্য অন্তত: ২৮ হাজার টাকার বীজ পেঁয়াজের প্রয়োজন হবে। এত চড়া দামে বীজ কিনে লোকসানে পড়ার শঙ্কায় আবাদ কম হয়েছে। এছাড়া অসময়ে বৃষ্টিতে তৈরি জমি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওইসব জমিতে আবারও হালচাষ করতে হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের নতুন সবজি বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বাধাকপি ৩০টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পালং শাক ৪০ টাকা, গাঁজর ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে এ অঞ্চলের কৃষকদের বোরো ধান ছেড়ে অন্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষিবিদরা বলছেন, পানিসাশ্রয়ী ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমে যাবে। এতে রক্ষা পাবে পরিবেশের ভারসাম্য। এজন্য সবজি, গমসহ পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, এ উপজেলার কুসুম্বা, মান্দা, নুরুল্লাবাদসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মাটিতে প্রচুর পরিমানে সবজির চাষ হয়ে থাকে। কৃষকরা তাদের জমি থেকে টাটকা সবজি তুলে স্থানীয় হাটবাজারে প্রতিদিন বিক্রি করছেন। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে চলে যাচ্ছে। অল্প জমিতে সবজি চাষ করে বেশি আয় হওয়াই দিনদিন বাড়ছে এর পরিধি।