রাজশাহীতে পুলিশের বিরুদ্ধে সোনা ধরে সোনা গায়েব এর অভিযোগ

Loading

সৌমেন মন্ডল, রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিরুদ্ধে সোনা কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। চারটি সোনার বার আটকের পর দুটি গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে বোয়ালিয়া থানার সামারি টিমের প্রধান এসআই মতিনের বিরুদ্ধে। সোনা গায়েব নিয়ে মহানগর পুলিশের ভেতর তোড়পাড় শুরু হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর কাতার প্রবাসী শ্রমিক আজিজুল ও ফারুক দুটি করে সোনার বার নিয়ে দেশের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফিরছিলেন। নগরীর বর্ণালীর মোড় এলাকায় তাদের বাস থেকে নামিয়ে নেন এসআই মতিন। এর পর দুটি সোনার বারসহ ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে আজিজুল ও ফারুককে আদালতে চালান করা হয়।

পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ দুটি সোনার বার গায়েব করেছেন। মামলায় না দেয়া দুটি সোনার বার ফেরতের জন্য তাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকাও নিয়েছেন এসআই মতিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর ফেরত দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই শ্রমিকের বাড়ি ও এসআই মতিনের গ্রামের বাড়ি একই জায়গায় এবং তারা পরস্পরের প্রতিবেশী। দুই প্রতিবেশী প্রবাসী শ্রমিকের দেশে ফেরার আগাম খবর পেয়েই তাদের বাস থেকে নামিয়ে নেন মতিন। সোনা ও বিদেশ থেকে আনা মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নিতেই মতিন পরিকল্পিতভাবে তাদের আটক করেন। চারটি সোনার বার পেয়ে দুটি গায়েব করে দেন।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগে আরও জানা গেছে, আজিজুল ও ফারুককে আটকের পর এসআই মতিন তাদের পরিবারের কাছে নিজেই ফোন করেন। ফলে দুই প্রবাসীর স্ত্রীসহ আত্মীয় স্বজন ও এলাকার কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি ওই রাতেই বোয়ালিয়া থানায় যান তার কাছে। চারটি সোনার বার ও লাগেজসহ আটক দুইজনকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু মতিন তাদেরকে বলেন, ছাড়া যাবে না। আর ছাড়তে গেলে মোটা টাকা লাগবে। বিদেশে কাজ করে অনেক কামিয়েছে।

এদিকে দুই শ্রমিকের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারা দেশে ফেরার আগের দিন কাতারের সুকসাউদ গোল্ড মার্কেটের গালফ জুয়েলারি থেকে চারটি চালানের মাধ্যমে প্রতিটি ১০ তোলা ওজনের ২৪ ক্যারেট মানের প্রতিটি সোনার বার ২৬ হাজার ৫০০ কাতারি রিয়ালে ক্রয় করেন। ফারুকের নামের দুটি সেলস ইনভয়েস নম্বর দুটি হল ১৮২১৪৩ ও ১৮২১৪৩। অন্যদিকে আজিজুলের নামের সেলস ইনভয়েসের দুটি নম্বর যথাক্রমে ১৮২১৭০ ও ১৮২১৭১।

আটকের দিন রাতে আজিজুল বোয়ালিয়া থানায় থাকা অবস্থায় বলেন, তারা দুটি করে সোনার বার কিনেছিলেন এই ভেবে যে দেশে ফিরে বিক্রি করলে কিছু বেশি টাকা পাওয়া যাবে। কাতারে চাকরি চলে যাওয়ায় আর সেখানে ফেরা হবে না। আর এই টাকা দিয়ে দেশে ছোটখাটো কিছু ব্যবসা করে পরিবার চালাবেন। সোনা আনলে বিমানবন্দরে জানাতে হয় এটা তাদের জানা ছিল না। তারা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সোনা আনেননি।

আজিজুলের স্ত্রীসহ এলাকার আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জানান, আটকের পরদিন এসআই মতিন তাদের প্রস্তাব দেন, দুটি সোনার বার দিয়ে মামলা দেয়া হবে। আর ৫ লাখ টাকা দিলে দুটি সোনার বার ফেরত দেয়া হবে। তার প্রস্তাব অনুযায়ী আজিজুল ও ফারুকের স্বজনরা ২ অক্টোবর দুপুরে থানার দোতলায় মতিনের চেম্বারে গিয়ে নগদ ৫ লাখ টাকা তার হাতে দেন। এরপর সন্ধ্যার পর মাল ফেরত দেয়ার কথা বলে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগে আজিজুল ও ফারুককে দুটি সোনার বার দিয়ে আদালতে পাঠানোর পর এসআই মতিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে থানা থেকে চলে যান।

৩ অক্টোবর এলাকার লোকজনসহ শরিফা আবারও মতিনের কাছে এসে অন্তত: দুটি সোনা ফেরত দেয়ার জন্য তার হাতে পায়ে ধরেন কিন্তু তিনি না করে দেন। অভিযোগকারীরা নেয়া টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে ইয়াবা দিয়ে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়।

গ্রেপ্তারকৃত আজিজুলের স্ত্রী শরিফা খাতুন বলেছেন, তিনি ও তার পরিবার ন্যায়বিচারের আশায় পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করতে চাইলে ৩ অক্টোবর এসআই মতিন তাকে ফোনে হুমকি দিয়ে বলেছেন, অভিযোগ করলে রিমান্ডে এনে তোর স্বামীকে একবারেই খালাস করে দিব। স্বামীকে বাঁচাতে চাইলে মুখ বন্ধ রাখবি।

অভিযোগকারী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর কাতারের দোহায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শেষে গত ১ অক্টোবর ইউএস বাংলার বিএস-৩৩৪ নম্বর ফ্লাইটে সকাল ৮টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আজিজুল ইসলাম (৪০) ও ফারুক হোসেন। ওই দিনই তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাসে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন।

এ ঘটনায় এসআই মতিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি দাবি করেছেন, আজিজুল ও ফারুকের দেহ তল্লাশি করে দুটি সোনার বার পাওয়া যায়। যার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সোনা আনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সোনার দুটি বার গায়েবের বিষয়ে এসআই আবদুল মতিন বলেন, আসামিরা বিদেশ থেকে সোনা চোরাচালান করে এনেছে। এ অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করে মামলা করা হয়েছে। দুটি সোনার বার ফেরতের জন্য ৫ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। অন্য অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই বলে তার দাবি।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, দুইজনের কাছে দুটি সোনার বার পাওয়া যায়। দুটি দিয়েই মামলা দেয়া হয়েছে।