শার্শা উপজেলায় তরমুজের আকাশচুম্বি মুল্যতে চাপা ক্ষোপ ক্রেতাদের

Loading

সুস্বাদু রসালো ফল তরমুজ। তরমুজ খেতে কার না ভালো লাগে। মৌসুমী ফলের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ফল এই তরমুজ। দুঃসহ গরমে স্বস্তি এনে দেয় তরমুজ। তরমুজ তৃষ্ণা মেটাতে এর জুড়ি নেই। শরীরে এনে দেয় আলাদা প্রশান্তি। শরীরের পানির চাহিদাও মিটিয়ে থাকে তরমুজ। এছাড়াও তরমুজের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এসব কারণে এই অসহনীয় গরমে তরমুজের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
পাশাপাশি মৌসুমী ফল হিসেবে আত্মীয় বাড়িতে তরমুজ পাঠানোরও রেওয়াজ রয়েছে ।

তাই এই সময়ে তরমুজের চাহিদা প্রচুর। এই ব্যাপক চাহিদাকে পূঁজি করে বর্তমান সময়ে তরমুজের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা। ছোট্র একটি তরমুজের দাম ৩শ টাকা থেকে বড় সাইজের একটি তরমুজ এখন ৬০০ টাকা পর্যন্ত!
কিছু দিন আগেও বড় সাইজের একটি তরমুজ বিক্রি হতো যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, সেখানে এখন ওই সাইজের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়! মাঝারি সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। ছোট সাইজের তরমুজও ২শ ৫০ বা ৩শ থেকে ৪০০ টাকার নিচে মিলছে না।

তরমুজের এই আকাশ ছোঁয়া দামের জন্য চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দিচ্ছেন মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বড় সাইজের একটি তরমুজ কিনে আনতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায়। এ কারণে তারা বড় সাইজের তরমুজ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এর নিচে বিক্রি করলে তাদের লাভ তেমন হচ্ছে না। তাই তাদেরকে তরমুজের দাম একটু বাড়তিই রাখতে হচ্ছে।
যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণ বাজারের ফল ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, এই গরমে তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। তাছাড়া এখন রমজান মাস। সব মিলিয়ে তরমুজের আঁকাশ ছোঁয়া মূল্য। গত এক সপ্তাহে কোনো তরমুজের তেমন কোনো সরবরাহ ছিল না। পুরো এক সপ্তাহ পর আবার তরমুজ এনেছি। এবারের তরমুজগুলো সাইজে ছোট বড় মিলেই এনেছি।

ছোট সাইজের প্রতিটি তরমুজ বিক্রি করছি আমরা ৩শ থেকে ৪০০ টাকা করে। গত সপ্তাহে বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি করেছি ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। তরমুজের সরবরাহ কম থাকায় আমরা বাড়তি দামে কিনে এনেছি। এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। এদিকে তরমুজের এই লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তরমুজ ব্যবসায়ীরা এমন অনৈতিক সুযোগ নেয়ায় ভীষণ ক্ষুব্ধ তারা।

এ প্রসঙ্গে তরমুজ কিনতে আসা সালেহা খাতুন বলেন, হঠাৎ করে অসহ্য গরম পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে এখানে চাহিদা মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। এরমধ্যে চলছে তাপদাহ। এ কারণে গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষজন। এই সুযোগে তরমুজের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন এখানকার মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা।

একটি বড় সাইজের তরমুজ কিনতে গিয়ে দাম শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। কিছু দিন আগেও যে তরমুজের দাম ছিল দেড়শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা, সেই তরমুজ এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৫শ থেকে সর্বচ্চো ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়! এটা খুবই অন্যায়। কোনোভাবেই এটা কাম্য নয়। এভাবে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়াতে পারেন না। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত।
একই প্রসঙ্গে ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগেও মাঝারি সাইজের একটি তরমুজ কিনেছিলাম ১২০ টাকায়। এখন ওই সাইজের তরমুজ ৫০০ টাকার নিচে মিলছে না। এভাবে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তরমুজের দাম এত বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ কিনবে কিভাবে? এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। তীব্র দাবদাহের এই মৌসুমে তরমুজ খুবই উপকারী একটি ফল। বহু গুণে গুণান্তি তরমুজের কিছু উপকারিতা দেওয়া হলো-তরমুজের উপকারিতা : গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। এই ফলে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ পানি আছে। তাই তরমুজ খেলে সহজেই পানির তৃষ্ণা মেটে।তরমুজের বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যামাইনো এসিড, নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী বজায় রাখে।

উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে: উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। এতে বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণও অনেক। বিটা ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে। প্রতিদিন দুই কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে শরীরে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-র চাহিদা মেটে। তরমুজে আরও আছে পটাশিয়াম, যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। পটাশিয়াম শরীরে ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ২ কাপ তরমুজে ৩৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পরিমাণে কম হলেও তরমুজে সোডিয়াম রয়েছে।

ত্বক ভালো রাখে: প্রতিদিন ২ কাপের মতো তরমুজ খেলে শরীরে ভিটামিন এ-র চাহিদা পূরণ হয়। তরমুজ খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে। কারণ ভিটামিন এ ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। তরমুজের ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি শরীরে এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজে আছে থায়ামিন ও ম্যাগনেসিয়াম। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ শরীর সতেজ রাখে। এতে ফ্রি র‌্যাডিকেলস প্রশমিত হয়। ফ্রি র‌্যাডিকেল রক্তনালীতে কোলেস্টেরলের স্তর তৈরি করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাঁড়ায়।
এর থেকে অ্যাজমাও বৃদ্ধি পেতে পারে। হাড়ের জোড়ায় ব্যথা বাড়ে।

সবুজ খোসাসহ তরমুজ ক্যানসার রোগীদের জন্য খুবই আদর্শ। অ্যাজমা, ডায়াবেটিসের মতো রোগে ব্যথা উমশমে তরমুজ সাহায্য করে। তরমুজের বিঁচি অন্ত্রের জন্য উপকারী। শুধু মাত্র তরমুজের উর্দ্ধমুখি দামের কারনে এমন হরেক রকম উপকারী বন্ধু ফল তরমুজের স্বাদ এবং উপকার থেকে পিছিয়ে পড়ছে নি¤œ আয়ের মানুষ সহ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ।