স্টাফ রিপোর্টার: শোকাচ্ছন্ন নাটোরের লালপুরের আকাশ। এই শোক স্বাধীনতার মহান স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হারানোর শোক। এভাবে ৪৮ বছর ধরেই শোকে কাঁদছে প্রকৃতিও। বৃষ্টির টানা কান্নায় আকাশ যখন শোকাচ্ছন্ন তখন শোকাবহ আমেজ লালপুরের মুরদহে।
হাফিজ নাজনিন ফাউন্ডেশন ভবন ঘিরে হাজারো মানুষ। একদিকে চলছে বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে স্মৃতিচারণ অন্যদিকে গণভোজের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
হাফিজ – নাজনিন ফাউন্ডেশন জুড়েই যেন এক বিশাল চিত্রশালা। দেয়ালে দেয়ালে টুঙ্গিপাড়ার সেই ” খোকা” থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার বিমূর্ত ছবি।
বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরের সংগ্রামে, ৪৭ এর দেশভাগ থেকে ৫২ এর শহীদের রক্তখচিত বর্ণমালা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ৭১ এর প্রলয়ংকারী মুক্তির সংগ্রাম, ডিসেম্বরের বিজয়, দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষায় বাঙালি জাতির দীর্ঘ ২৫ বছরের শোষণ-নিপীড়ন থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি, একটি স্বাধীন দেশ, লাল-সবুজ পতাকা, একটি সংবিধান, দূর্বার গতিতে বাংলাদেশের ছুটে চলা থেকে ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকদের হাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে থাকা সারি সারি আলোকচিত্র।
প্রকৃতিতে শ্রাবন শেষ হয়েছে ১০ দিন আগে। শরৎ এসেছে। তা সত্ত্বেও থামেনি আকাশের কান্না।
বৃষ্টির সেই কান্না উপেক্ষা করে দলে দলে মানুষ এসেছেন। বুকে শোকের ব্যাজ। চেতনায় মুজিব।
শিশু,কিশোর থেকে সব বয়সী মানুষ ব্যাথাতুর হৃদয়ে স্মরণ করছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো ২৬ আগষ্ট ( শুক্রবার) দুপুরে নাটোরের লালপুরের মুরদহে হাফিজ নাজনিন ফাউন্ডেশন আয়োজন করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের।
“মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব এবং সংগ্রামী আদর্শিক নেতা” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-৪৩ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ।
হাফিজ – নাজনিন ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি মো. আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নাটোরের পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা, লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. মোমীনুল ইসলাম, বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী, ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) মো. শরীফ আল রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) মো. আকতারুজ্জামান, লালপুর থানার ওসি মো. উজ্জ্বল হোসেন, ওসি জাবেদ মাসুদ, ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৫ আগস্টের ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা সেদিন বিদেশে থাকায় ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছিলেন বলেই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স বাতিল করে ঘাতকদের বিচার করেছেন। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন এবং দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নবদিগন্তের সূচনা করেছেন। পরে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া মাহফিল।