সাভারে চাঁদা না দেওয়ায় শ্রমিককে বেধড়ক পিটিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধের অভিযোগ

Loading

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার সাভারে সঙ্ঘবদ্ধ জমি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না পেয়ে ওই চক্রের সদস্যরা নির্মাণাধীন বাউন্ডারি ভেঙ্গে এক নির্মাণ শ্রমিককে বেধড়ক পিটিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকার আশুলিয়া মডেল টাউনের জাকির হোসেনসহ চার জনের যৌথ মালিকানাধীন জমিতে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ আলী রতনকে আহত অবস্থায় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার বিসকা ইউনিয়নের বাত্তুয়াদি গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে।

আর এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাছিবুল হাসান নামের এক ঠিকাদার।

তার দায়ের করা অভিযুক্তরা হলেন, ভেজাল জমি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের প্রধান সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কাকাব এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে মো: আমির হামজা (৩৭), কালিয়াকৈর এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে মো. আতিক (৩০), ও রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. নোমান (৩২) । এছাড়াও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

তবে ভুক্তভোগীদের ঠেকাতে অভিযুক্তরাও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন। দুই পক্ষের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দিদারুল ইসলাম।

ঘটনাস্থল ঘুরে ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকায় আশুলিয়া মডেল টাউনের জাকির হোসেন সহ যৌথ চার জনের ক্রয়কৃত মালিকানাধীন জমিতে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে দেওয়ার চুক্তি করেন ঠিকাদার রবিউল এবং হাছিবুল হাসান। চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার হাছিবুল হাসানের ৬ জন শ্রমিক বাউন্ডারি নির্মান কাজ শুরু করেন। এসময় বিরুলিয়া এলাকার জমি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের হামজা বাহিনীর প্রধান আমির হামজা নির্মান শ্রমিকদের কাছে গিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। হামজা বাহিনীর অন্যতম সদস্য আতিক ও নোমান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। শ্রমিকরা চাঁদার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন এবং নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেলে নির্মান শ্রমিকদের সরদার মোহাম্মদ আলী রতনকে লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধরক মারধর করেন। প্রাণে রক্ষা পেতে অন্য শ্রমিকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রান নাশের হুমকি দেয় আমির হামজা সহ তার বাহিনীর সদস্যরা। খবর পেয়ে ঠিকাদার হাছিবুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে আহত রতনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, আহত রতন শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখমসহ পুরুষাঙ্গে আঘাত পেয়েছে। তাকে কয়েকদিন বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জমি ক্রয় বিক্রয় চক্রের হামজা বাহিনীর প্রধান অভিযুক্ত আমির হামজার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আতিক বলেন, আমি আমির হামজা কাকার ম্যানেজার, পিএস”একাউন্স বলতে পারেন। আমরা মারামারি করতে যাইনি ওরাই মারামারি করতে এসেছে। বিরুলিয়া ইউনিয়নের আশুলিয়া মডেল টাউনে আমির হামজা কাকার ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। আমরা সেই জমি বিক্রি করতে মডেল টাউন এলাকায় কাগজ দেখাতে গিয়েছি। আমরা কাজ কাম শেষ করে বের হওয়ার সময় আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করেছে জুয়েল ও সন্ত্রাসীরা, সাথে জুয়েল এর পিএস সোহেল ছিল।

শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তরভোগীরা.? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কাউকে চিনি না। তাদের উপর হামলার কথা যদি বলে তাহলে বলুক। আমরা এটার ব্যাবস্থা নিচ্ছি। সাভার মডেল থানায় অভিযুক্তদের করা পাল্টা অভিযোগের কপিটি চাইলে পরে দিচ্ছি আমি থানায় ওসি সাহেবের রুমের সামনে বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।

এর তিন ঘন্টা পর তাদের অভিযোগের কপিটি পেতে দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আতিক অপর অভিযুক্ত নোমানকে মুঠোফোনটি ধরিয়ে দেন। অপর অভিযুক্ত নোমান বলেন, আপনার সাথে কালকে দেখা করে দিবো। আপনাকে চিনলাম না আমি। প্রতিবেদকের পরিচয় বারবার দেওয়া সত্ত্বেও তিনি অভিযোগের কপি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎ করে পরিচিত হতে চাইলেও তিনি বলেন, আজ সম্ভব না” আগামীকাল চায়ের দাওয়াত রইল।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দিদারুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, অভিযোগের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।