জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সময় ভোল্টের ইনচার্জের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা চাবি নিয়ে তাদের বাড়িতে যেতেন। তবে কখন কোন কর্মকর্তার কাছে থাকা চাবি নিয়ে কে বা কারা ডুপ্লিকেট চাবি তৈরি করে ভোল্ট থেকে সোনা চুরি করেছেন তা তিনি জানেন না, কিন্তু তিনি নির্দোষ।’ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শম্পা বসু তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আটক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদার রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলার বাঁধুলী গ্রামের খালপাড়া এলাকার মৃত জালাল সরদারের ছেলে। গত মঙ্গলবার সিআইডি পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু রিমান্ডের একদিন পরই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে শাহিবুল সরদার আরও জানান, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পুরাতন ভবনের ২য় তলার গোডাউনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এই গোডাউনের বিভিন্ন ভোল্টে সোনা ও বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষিত ছিল। ২ মাস আগে তিনি গোডাউনের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন আগের কর্মকর্তার কাছ থেকে। কাগজপত্র অনুযায়ী ভোল্টের মালামালও বুঝে নেন। আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গোডাউন ও ভোল্টের চাবি বাড়ি নিয়ে যেতেন। তাদের মত তিনিও গোডাউনের চাবি বাড়িতে নিয়ে যেতেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বরের রাত ৮ টা থেকে ১১ নভেম্বর সকাল ৮টার মধ্যে যে কোনো সময় বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পুরাতন ভবনের ২য় তলার গোডাউনের তালা ভেঙে চোরেরা ভোল্টের তালা খুলে ১৯ কেজি ৩১৮ দশমিক ৩ গ্রাম সোনা চুরি করে নিয়ে যায়। যার মূল্য ১০ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৬২ টাকা। এই ভোল্টের চাবি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদারের কাছেই থাকতো। এছাড়া গোডাউনের বিভিন্ন লকারে সোনাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র থাকলেও সেগুলো অক্ষত ছিলো।
তবে সোনা চুরির সময় সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিলো। বিষয়টি জানাজানি হলে কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। একই সাথে কর্তৃপক্ষ গোডাউন ইনচার্জ শাহিবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপরই পুলিশ তাকে এই মামলায় আটক করে।মামলার কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় ২৭ নভেম্বরে মামলা চলে যায় সিআইডিতে। এক বছরের অধিক সময়ে তদন্ত করেও কোন কুল কিনারা করতে পারেনি সিআইডি।
অবশেশে ভোল্ট ইনচার্জ শাহিবুল সরদারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় তদন্ত আরো গতি বাড়বে বলে সিআইডি আশা করছে। তবে চুরির ব্যাপারে স্থানীয় ভাবে রাজনৈতিক একটি মহল অপর পক্ষকে ফাঁসানোর চেস্টা করেছিল।
বেনাপোল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, চুরির ঘটনা কাস্টমসের ভেতর থেকেই ঘটানো হয়েছে। চোরেরা আগে থেকেই দীর্ঘ দিন পরিকল্পনা করে এ ধরনের চুরি করার সাহস পেয়েছে। কারণ চুরির সময় গোটা কাস্টম হাউসের সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম থেকে কীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো, আর ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে ম্বর্ণ, টাকা লুট করা হলো কীভাবে, সেটাই এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের দেখা উচিত। এর সাথে কাস্টমসের রাঘব বোয়ালরা জড়িত বলে তাদের ধারনা।