এবার এক পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বন্দ্ব নিরসনের পর তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ মিলে ১৫-১৭ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
তাবলিগের দুই পক্ষ এক হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে তাবলিগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, তাবলিগের শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের, সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তাবলিগে বিশৃঙ্খলা চলছে। এটাকে প্রশমিত করার জন্য সবাই মিলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে সব পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে দুই গ্রুপকে একসঙ্গে বসাতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে আমরা একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি যে, এবার বিশ্ব ইজতেমা একসঙ্গে এক জায়গায় এবং উভয় গ্রুপ মিলেই করবে।’
কিছু কর্মপদ্ধতি ও ইজতেমার তারিখ নির্ধারণের জন্য আজকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুপক্ষ মিলে তারিখ ঠিক করেছে, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়নি। আমরা বলেছি এ কাজটি একতাবদ্ধভাবে করতে হবে যেন দেশবাসী খুশি হয়। ওনারা রাজি হন।’
‘দুই পক্ষ দুটি ডেট ঠিক করছিলেন। একদল বলেছিলেন ৮ তারিখ (৮, ৯, ১০ ফেব্রুয়ারি), আরেক দল বলেছিল ২২ (২২, ২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি)। তখন মীমাংসার পথ হিসেবে আমরা প্রপোজ করেছি, এমন না হয় এক পক্ষ বলবে ওনাদের কথামত তারিখটা ঠিক হলো। আমরা দু’টার মাঝামঝি একটা তারিখ রাখলাম ১৫, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি। এই তিনদিন একসঙ্গে টঙ্গীর ময়দানে অন্যান্য বছরের মতো বিশ্ব ইজতেম সুন্দরভাবে পালিত হবে’ বলেন শেখ আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করব, আপনারা জেনে খুশি হবেন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। গোলামাল-গোলযোগ নেই, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সুশৃঙ্খলভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত রেখে ইজতেমা সুন্দরভাবে করার একটা প্রয়াস নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের কারণেই আমরা এটি করতে সক্ষম হয়েছি’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সুবিধার্থে বিগত বছরগুলোতে দু’পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হয়েছে- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার একবারেই হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যাতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার করা হবে।’
ঐক্যবদ্ধভাবে ইজতেমা করার জন্য দু’পক্ষের কিছু শর্ত ছিল, সেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি কোনটা মিটমাট না হত তাহলে ঐক্যবদ্ধ হল কীভাবে। ওনাদের সব প্রশ্নের সন্তোষজনক সমাধান করতে পারছি বলেই তাদের আমরা সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। এক হয়ে (ইজতেমা) করতেছে মানেই আমরা তাদের অল্প হলেও সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। একদিনে সবটুকু হয় না।’
‘লেট আস হোপ ফর দ্য বেস্ট। ভবিষ্যতে আরও সময় পাব সেই সময়ে চেষ্টা করব যেটুকু বাকি আছে সবটুকু সমাধান করে চিরদিনের জন্য দ্বন্দ্ব দূর করব।’
তাবলিগ জামাতের দিল্লির আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত। আলেমরা সাদবিরোধী ও সাদপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক গ্রুপে রয়েছেন সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশ তাবলিগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। অপর গ্রুপে রয়েছেন মাওলানা সাদবিরোধী কওমীপন্থী শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।
এ বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে ইজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল।
গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে দুই পক্ষের হতাহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় সম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’র আয়োজনও করেছিল তাবলিগ জামাত। তবে নির্বাচনের আগে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে সভা করে ইজতেমা স্থগিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, নির্বাচন শেষে দুপক্ষের সঙ্গে বসে অভিন্ন ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভায় দুপক্ষের বিবাদ নিরসন হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।