নিউজ ডেস্ক : এনএআইআর এর মাধ্যমে প্রতিটি হ্যান্ডসেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এটি কার্যকরের পর থেকে অননুমোদিত হ্যান্ডসেট দেশের নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে না।
চাইলেই একজনের সিমকার্ড খুলে আরেকজনের হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যাবে না। হ্যান্ডসেট হাত বদলের আগে করতে হবে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত নেটওয়ার্কে ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন হবে। এর জন্য গ্রাহককে কোনো দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না।
বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী, ইমপোর্ট লাইসেন্স থাকলেও, কেউ যদি কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য আনতে চায়, তাহলে ঐ ব্র্যান্ড বা তাদের স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের ‘অনুমতি’ (NOC) প্রদানের শর্ত রয়েছে, এমন দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, বাস্তবে ঐ অনুমতি পাওয়া খুব কঠিন, এবং ফলে অনেক পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ী বাজার থেকে হারিয়ে যাবে।
এই সীমাবদ্ধতা অনুসরণে বাজার কনসেন্ট্রেট হয়ে ছোট একটি সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর মধ্যে চলে আসতে পারে,এমন আশঙ্কা তারা ব্যক্ত করেছেন।
একাধিক ব্যবসায়ী ও পর্যবেক্ষকের বক্তব্যে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে দুইটি বড় প্রশ্ন উঠেছে — প্রথম, NOC ধারাটি কীভাবে প্রয়োগযোগ্য ও স্বচ্ছ হবে; দ্বিতীয়, যদি কেবল কিছু ব্র্যান্ড ও আমদানিকারককেই সুবিধা হয়, তাহলে বাজারে প্রতিযোগিতা কোথায় থাকবে?
এ বিষয়ে নীতিনির্ধারক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে (BTRC) নীতিমালা প্রণয়নের আগে বিস্তৃত স্টেকহোল্ডার পরামর্শ ও বাস্তবভিত্তিক পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। তারা আরও বলেন, যে কোনো নীতি যদি বাজারে কয়েকটি বড় প্লেয়ারকে সুবিধা দেয় এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বাজার থেকে উচ্ছেদ করে, তা দীর্ঘমেয়াদে ভোক্তা ও দেশের সার্বিক অর্থনীতির ক্ষতি করবে।
কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসক-পরামর্শক জানান, নির্বাচনের আগে বড় ধরনের নিয়ন্ত্রক পরিবর্তন দ্রুত প্রয়োগ করা হলে তা নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে, এবং এমন সিদ্ধান্তগুলোকে রাজনৈতিক প্রসঙ্গে বিশ্লেষণ করা স্বাভাবিক। তারা মনে করিয়ে দেন, নীতিনির্মাণে সময়সীমা, ট্রায়াল-পিরিয়ড ও পর্যায়ক্রমিক প্রয়োগ রাখা হলে বাজার ও নাগরিকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব।
সম্ভাব্য সমাধানগত ধাপ (বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব)
* BTRCর এনওসি (NOC) নীতির পরিবর্তে একটি স্বচ্ছ অনুমোদন মেকানিজম চালু করা
* আমদানি শুল্ক ও কর কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রতিবেশী দেশ ও স্থানীয় উৎপাদনকারীদের অনুরুপ প্রতিযোগিতামূলক হার নিশ্চিত করা।
* একটি অন্তর্বর্তী সময়ে, দেশের সকল মোবাইল ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা ও পাবলিক অবজারভেশন পিরিয়ড রাখা।
* ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য বিটিআরসি ইমপোর্ট লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা।
নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অবস্থান অনুযায়ী, NEIR বাস্তবায়নের লক্ষ্য অ-নিবন্ধিত ও ক্লোন ডিভাইসগুলোর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা এবং ব্যবহারকারীর ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু নীতির প্রয়োগপদ্ধতি ও সময়নির্ধারণের ওপর যদি প্রয়োজনীয় স্টেকহোল্ডার পরামর্শ না নেয়া হয়, তাহলে তা বাজারে অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক ক্ষতির কারণে বৃহৎ সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমান সময়েই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে (বিটিআরসি, এনবিআর, বণিক-সমিতি ও ব্যবসায়ী সংগঠন) আন্তঃকর্মযোগ করে দ্রুত আলোচনা আয়োজন করা অনিবার্য মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।
একদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও ডেটা সুরক্ষার যুক্তি, অন্যদিকে ব্যবসা ও প্রতিযোগিতার বাস্তবতা—এই দুই মেরুর টানাপোড়েনে এখন নীতি-নির্ধারণের দিকনির্দেশ নির্ভর করছে সময়োপযোগী সংলাপের ওপর। যদি এখনই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এক টেবিলে না বসে, তাহলে একদিন হয়তো আমরা দেখব—মোবাইলের পর্দায় শুধু নেটওয়ার্ক হারানো নয়, হারিয়ে যাবে বাজারের ভারসাম্যও।