প্রশাসনিক কর্তাদের চোখে ইবি উপাচার্য ড. রাশীদ আসকারী।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ১২তম উপাচার্য হিসেবে আগামী ২০ আগস্ট মেয়াদপূর্ণ করতে যাচ্ছেন অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী। এর আগে কেউ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন নাই।
এই দীর্ঘ চার বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, অবকাঠামোগত, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় কেমন অবদান রেখেছেন, কেমন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। উপাচার্য হিসেবে কেমন পারদর্শী ছিলেন এসব বিষয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের মতামত তুলে ধরেছেন মাহমুদুল হাসান কবীর।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুর রহমান বলেন, খুবই চমৎকারভাবে উপাচার্য ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী, কোষাধ্যক্ষ ড. সেলিম তোহা এবং সেই টিমে আমি খুবই সুন্দরভাবে, সুস্থভাবে কাজ করতে পেরেছি। বর্তমান প্রশাসন যা প্রত্যাশা ছিল তার থেকে বেশি উপহার দিয়েছে। উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ এর কাজের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা এতই ভালো ছিল যার তুলনা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে উন্নতি হয়েছে এটাই আমার প্রত্যাশা। আমি মনে করি এত স্বচ্ছ, সুন্দরভাবে কাজের পরিবেশ খুবই কম হয়েছে। এই প্রশাসন নতুন করে আসলে আরো ভালো হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা বলেন, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সব সময় আমাকে সহযোগিতা করে আসছেন। ওনারা নির্ভীকভাবে, নিবেদিতভাবে স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য স্বপ্ন দেখেছেন, পরিপূর্ণ সময় দিয়েছেন। আমাদের তিনজনের সমন্বয় হয়েছে বিধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, আমার দৃষ্টিতে আসকারী স্যার অত্যন্ত সৎ মানুষ। তিনি শুধুমাত্র আইসিটি সেলে ৩জন অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন এছাড়া একজনও কর্মকর্তা নিয়োগ দেন নাই। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার আমলেই ক্রাইটেরিয়ার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে শুধু ভাইভার মাধ্যমে হতো এখন লিখিত পরীক্ষা হয়। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করেছেন এবং ৩৭ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শাস্তি দিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স নীতিতে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা সকল বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন। সার্বিক বিষয়ে গত প্রশাসন ও তার আগের প্রশাসন থেকে বর্তমান প্রশাসনের অগ্রগতি ভালো হয়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড.পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দেখা একজন ইতিবাচক মানুষ ড. রাশিদ আসকারী। তিনি সহজে বিচলিত হন না। জটিল কোন কাজ বাস্তবায়নে যখন আমরা দ্বিধাগ্রস্ত থাকি সেক্ষেত্রে তিনি প্রথমে নিজে করে অন্যদের উৎসাহিত করেন। যেমন তিনি ভিসি হওয়ার পর যখন অফিস সময় বৃদ্ধি করলেন, অনেকের বিকালে ক্লাস নিতে দ্বিধা বা জড়তা ছিল। তিনি তার সমস্ত ক্লাসগুলো বিকালে নিতেন। আমার দেখা মতে তিনি কঠোর প্ররিশ্রমী একজন দর্শক, শ্রোতা, পাঠক, গবেষক, বিশ্লেষক, মননশীল রূপকারী এবং বক্তা। অর্থাৎ উন্নত নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতাসমূহ তার মধ্যে বিদ্যমান।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.সাইদুর রহমান বলেন, এ যাবতকালে নিকট অতীতে আমরা যে প্রশাসন দেখেছি বর্তমান ভিসির মেয়াদকালে প্রকৃত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সে উন্নয়ন শুধু ভৌত অবকাঠামোগত নয় এ উন্নয়ন একাডেমিক, প্রশাসনিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিগত। বর্তমান উপাচার্য আসার পর আঞ্চলিকতার যে তকমা ছিল তা খসিয়ে ফেলে জাতীয় লেভেল ছাড়িয়েও আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করেছে। একাডেমিক ক্ষেত্রে সেশন জ্যাম দূরীকরণ, সেমিস্টার পদ্ধতি প্রণয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়া। সার্বিকভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভুত উন্নতি সাধন করেছেন। মোদ্দা কথা ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন এটিই ওনার বড় অবদান।
পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক উনি উপাচার্য সুতরাং ওনার অনেক কিছুই আমার না জানা থাকবে৷ আমি পরিবহন প্রশাসক হিসেবে ওনার সাথে কাজ করতে হচ্ছে সে হিসেবে গত চার বছর ভালোই চলছে, পড়াশোনার পরিবেশ ভালো ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় কখনও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বন্ধ হয়নি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছরের অভিজ্ঞতায় বিগত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয় বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যও অনেক বর্ধণ করেছেন। আমি গত ২০১০ সালেও একবার পরিবহন প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলাম কিন্তু তখন ছাত্রছাত্রীদের যেমন পরিবহনে ভোগান্তি ছিলো আমি ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্র ছাত্রীদের এতো সমস্যা আমি দেখিনি। গত চার বছরে পরিবহন পুলে ১৫ টি বাস সংযুক্ত হওয়ায় পরিবহন ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে। গত চার বছরে একজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা খুব যে খারাপ ছিলাম সেটা আমার মনে হয়না আমরা ভালোই ছিলাম।
ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এফেয়ার সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদ বলেন, আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা কিভাবে আসবে ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিভাবে বিদেশ যাবে, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইবি কিভাবে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে এক্ষেত্রে উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারী কাজ করেছেন যা ইতিপূর্বে কেউ করেন নাই। এক্ষেত্রে তিনি টপ প্রায়োরিটি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়েছেন যার কারনে অল্প দিনে আমরা সফলতা পেয়েছি। আমার দৃষ্টিতে প্রশাসক হিসেবে তিনি খুবই তড়িৎকর্মা ও ডায়নামিক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান খান টুটুল বলেন, নিঃসন্দেহে উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারী একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সৎ, সৃষ্টিশীল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো নিয়ে চিন্তা করার জন্য অদ্বিতীয় মানুষ। তিনি দায়িত্বে আসার পর আইএমিডির রিপোর্ট অনুযায়ী শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করছে। ই টেন্ডার বাস্তবায়ন শুরু করেছি সাড়ে তিন বছর আগে থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুণগত মান নিশ্চিত ও সততার উপর অবিচল ছিলেন। টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে আমার উপর চাপ আসলে তিনি শক্ত হাতে দমন করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি উন্নয়ন কাজে কখনো অন্যায় প্রশ্রয় দেন নাই। ওনার সবসময় নির্দেশনা ছিল ক্যাম্পাসের অবকাঠামো উন্নয়ন করার পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধন করা।
ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক আতাউর রহমান বলেন, উপাচার্য রাশিদ আসকারীর সাথে আমার কাজের খুব একটা সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। ওনার সময়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিত মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার হয়েছে, অটোমেশন হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চেয়েছেন, ভালে কাজের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। লাইব্রেরির উন্নয়নের জন্য যখন যেটা চেয়েছি উনি করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া ব্যাক্তিগত ভাবে উনি খুব ভালো মানুষ।
ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু বলেন, উপাচার্য স্যারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পনেরো বছর পর সমাবর্তন হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল একটা অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইলফলক। তিনি দায়িত্বে আসার পর সেশন জট, অফিস টাইম পরিবর্তন এছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসেও অনেক প্রযুক্তি সংযুক্ত করেছেন। মূল সার্টিফিকেট কম্পিউটারাইজড করেছেন। এছাড়া আগে ২৫ টি বিভাগ ছিলো তিনি আরও ৯ টি বিভাগ সংযুক্ত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনলাইনে রেজাল্ট সহ অটোমেশনের কাজ চলছে। আমার মনে হয় স্যার বিগত চার বছর তার দায়িত্ব ভালোই পালন করেছেন।
চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারীর মেয়াদে চিকিৎসা কেন্দ্রের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই চার বছর তিনি সার্বিক দিক দিয়ে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন। একজন প্রশাসক হিসেবে সব বিষয়ে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি ওনার সাথে কাজ করে আর্থিক, মৌখিক সহযোগিতা পেয়েছি। মেডিকেল ৩য় তলায় বর্ধিত হচ্ছে। গুড, বেটার, বেস্ট, এর মধ্যে ওনাকে আমার বেস্ট মনে হয়েছে।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মোঃ সোহেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে উপাচার্যের অবদান অনেক যা আগের কোনো উপাচার্য থেকে পাইনি। আমি যতগুলো উপাচার্য দেখেছি তারমধ্য তিনি সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন সৎ মানুষ।