মৃধা শাহীন শাইরাজ, তালতলী (বরগুনা) : বরগুনার তালতলীর নলবুনিয়া শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ জোছনা উৎসব আজ (১২ডিসেম্বার বৃহস্পতিবার)। বরগুনা জেলা প্রশাসক পঞ্চমবারের মতো এ জোছনা উৎসবের আয়োজন করেছেন।বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ¯িœগ্ধ বেলাভ‚মিতে জেগে ওঠা চরের নাম রাখা হয়েছে “শুভসন্ধ্যা”। একদিকে সীমাহীন সাগর; আরেকদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিরি। অন্যদিকে দীর্ঘ ঝাউবন, তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সবমিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার-শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত! সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এক বিশাল ঝাউবন। দখিণের খোলা বাতাস ঝাউবন ¯পর্শ করে যাচ্ছে পরম আবেশে। খোলা বাতাসের ছোঁয়ায় উড়ন্ত চুলের মতো দুলছে ওই ঝাউগাছগুলোর আগা-বাগা ডালপালা। জন্ম থেকেই সমুদ্রের খোলা বাতাস গায়ে মেখে ঝাউগাছগুলো এখন অনেক বড় হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ আর ঝাউগাছের মাঝখানে শূন্য বালুরাশি। দৃষ্টিনন্দন এক সমুদ্র সৈকত! সমুদ্রের মৃদু ঢেউ, বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীরণের এ দৃশ্যটি প্রকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ। এই প্রেমময় দৃশ্যপটের নাম-শুভ সন্ধ্যা। দখিণে তাকালে অথৈ সাগরের ঢেউ আর ঢেউয়ের সাথে দোল খেলা মাছ ধরার ট্রলার ব্যতীত আর কিছুই দেখা যাবে না।প্রকৃতির সাথে সময় কাটিয়ে পূর্ণিমার চাঁেদর পানে তাকিয়ে জোছনা উৎসব পালিত হবে আজ। হেমন্তের শিশিরে নগ্ন পায়ে হাঁটার স্মৃতি অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন! মোম-জোছনায় চোখ-মন ভরানো হয় না কতকাল তা আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানে! তাইতো এই আয়োজন, “জোছনা উৎসব”। ত্রিমোহনার রূপালি জলরাশি ঘেঁষে বিস্তীর্ণ সৈকতে বসে হৈমন্তী পূর্ণিমা দেখে আপনি শিহরিত হবেনই। জোছনাপাগল হাজারো মানুষের সাথে গান, কবিতা, পুঁথি, পুতুল নাচ, যাদু প্রদর্শণী, যাত্রাপালা, হয়লা গান, নৃত্য, ফানুস ওড়ানো দেখে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে। আগামীকালের পূর্ণিমায় এখানেই জলজোছনায় একাকার হবে জোছনাবিলাসী হাজারো মানুষ।
অভিজ্ঞতা আর স্মৃতিকে সমৃদ্ধ করতে প্রিয় স্বজনদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন (১২ ডিসেম্বর বৃহ¯পতিবার) তালতলীর শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতের জোছনা উৎসবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ¯িœগ্ধ বেলাভ‚মি শুভ সন্ধ্যার বিস্তীর্ণ বালুচরে পঞ্চমবারের মত এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসবে যোগ করা হয়েছে নানা আয়োজন। উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুভ সন্ধ্যা সৈকতকে অপরূপ সয্যায় সাজানো হয়েছে, শুরু হয়েছে বাহারি পণ্যের পসরা। যাওয়া-আসার বিভিন্ন সড়কে তৈরী করা হয়েছে অসংখ্য আলোকসজ্জা সম্বলিত তোরণ। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। শুভ সন্ধ্যায় দেখা যাবে, সাগরপাড়ে সবুজের সমারোহে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও পাখির কুহু কুহুতান। মৃদু ঢেউয়ের ভালোবাসা পায়ে লাগিয়ে, ¯িœগ্ধ বাতাস গায়ে লাগিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে গোধূলি সন্ধ্যায় দেখা যাবে সূর্যাস্ত।
শুভ সন্ধ্যার পাশেই আশারচরের অবস্থান। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস সহ শুটকি পল্লী রয়েছে এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরা দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য ও বিশাল শুঁটকিপল্লী দেখতে যান এ আশারচরে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা। আশার চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লী কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে। আশারচরের শুঁটকি পল্লী, টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সোনাকাটা ইকোপার্কের হরিণসহ বন্যপ্রাণী ইত্যাদি দেখার পাশাপাশি দেখা মেলে মৎসজীবীদের কর্মব্যস্ততা আর সৈকতের বুকে স্থানীয় শিশুদের উচ্ছ¡াস। এখানে নদী সমুদ্রের তাজা মাছ পাওয়া যায় ফকিরহাট বাজারের ছোট ছোট খাবারের হোটেলগুলোতে, যা পর্যটকদের পেট ভরাবে। এখানে খুব অল্প টাকায় খাওয়া যাবে মাছ ভাত বা গ্রামীণ স্থানীয় সব খাবার। এই সৈকতটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবীন বিবেচনায় খাবার ও মাছের দাম তুলনামূলক সস্তা।