ইবি প্রশাসনের সাফল্য ও অগ্রযাত্রার ৩য় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ হতে সংবর্ধনা ।

Loading

এনামুল ইসলাম রাজশাহী প্রতিনিধি ঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য ও অগ্রযাত্রার ৩য় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদে­র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

বুধবার (২১ আগষ্ট) সকালে সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা­ বর্তমান প্রশাসনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন,উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী,উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম তোহা,রেজিস্ট্রার (ভার:) এস এম আব্দুল লতিফ ও কর্মচারী কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য সূমহ ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি ৪র্থ সমাবর্তন সফলভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রিধারীসহ প্রায় ১৪ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে, যা দেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকান্ড অভুতপূর্ব গতি লাভ করেছে। বিভাগগুলোতে বর্তমানে সেশনজট অনেকাংশে কমে এসেছে। একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অতি সম্প্রতি অনুষদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫টি থেকে ৮টি করা হয়েছে। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভেঙ্গে মানবিক অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ; ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভেঙ্গে বিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদ এবং বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদ করা হয়েছে।

২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে আটটি ও ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে একটিসহ নয়টি যুগোপযোগী বিভাগ খোলা হয়েছে এবং ২০২১ সাল নাগাদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯টি।

বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন ছাত্রীসহ ৩৯ জন বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আন্তর্জাতিক ৭টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অগ্রগতির কাজকে ত্বরাণি¦ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময় ৮টা-২টা’র পরিবর্তে এখন ৯টা-৪টা ৩০মিনিট করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩২তম সিন্ডিকেট সভায় টি.এস.সি.সি মিলনায়তনকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন’ নামকরণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৫তম সিন্ডিকেট সভায় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ স্থাপনের নীতিমালা গ্রহণ করেন এবং এবছর অনুষ্ঠিত ২৪২তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তানুসারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. শামসুজ্জামান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং একুশে কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্পের আওতায় খুব শ্রীঘ্রই ক্যাম্পাসে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ এবং ১৮টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন ২য় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের বি-ব্লক, শেখ রাসেল হলের এ-ব্লক, রবীন্দ্র-নজরুল কলাভবন ও আভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ এবং মেডিক্যাল সেন্টার ও গেস্ট হাউজের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের জন্য নির্মিতব্য ৫তলা আবাসিক ভবনের ৩য় তলা পর্যন্ত, ৫০০ কেভি সাবস্টেশন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিতব্য ১০তলা আবাসিক ভবনের ৫তলা পর্যন্ত ১ম পর্যায়ের নির্মাণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের উর্দ্ধমুখী ও আনুভূমিক সম্প্রসারণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

উদ্বোধন করা হয়েছে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া বিজ্ঞান ভবনের ৩য়-৫ম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ কাজের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের বিভিন্ন রাস্তা মেরামত ও সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পানির ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে এবং দৃষ্টিনন্দন লেক তৈরি করা হয়েেেছ। এছাড়াও পরিবহন সঙ্কট দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলে ৮টি এসি গাড়ি যুক্ত হয়েছে। অচিরেই আসবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বড় ২টি হিনো বাস।
শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ, সকল অনুষদ হতে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াদক্ষতা বৃদ্ধির নানামুখী উদ্যোগ, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসনের সুদক্ষ পরিচালনায় দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে

এসময় উপাচার্য বলেন, সাফল্য কতটুকু হয়েছে তা আমি বলবো না, এটা বিচারের দায়িত্ব আমি আপনাদের দিলাম। তবে যে সকল ব্যার্থতা রয়েছে, তার দায় আমি নিজে নিলাম ও যে সকল সুফল এসেছে তার কর্তৃত্ব আপনাদের দিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমরা কথায় নয় কাজে দেখাতে চাই। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ তা বাস্তবায়নের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. মোঃ রেজওয়ানুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক(ভারঃ) এ কে আজাদ, প্রধান প্রকৌশলী(ভারঃ) আলিমুজ্জামান খান টুটুল, হিসাব পরিচালক(ভারঃ) মোঃ ছিদ্দিক উল্যা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (ভারঃ) এ এইচ এম আলী হাসান, প্রধান মেডিক্যাল অফিসার(ভারঃ) ডাঃ এস এম নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ আতাউল হক, উপ-পরিচালক শাহ আলম কচি, উপ-গ্রন্থাগারিক মোছাঃ শাহনাজ বেগম, উপ-রেজিস্ট্রার রুহুল আমীন বাবু, সহায়ক কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ উকিল উদ্দিন এবং সাধারণ কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ আতিয়ার রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২১ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আশকারীকে উপাচার্য এবং আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সেলিম তোহাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়।