জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলা চলাকালীন সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারধর করে জাবির(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) খেলোয়াড় ও শিক্ষার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশীপের হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল খেলা চলাকালীন সময়ে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শক ও খেলোয়াড়রা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খেলোয়াড়দের উপর হামলা চালায়।
এই হামলার ঘটনায় ইবির সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহলসহ ৯জন খেলোয়াড় গুরুতর আহত হয়েছে। এদের মধ্যে খেলোয়াড় রাব্বি ও ইমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানায় ।
বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাবি ও ইবির মধ্যেকার খেলা চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া হামলায় ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান এক খেলোয়াড়। আহতদের মধ্যে খেলোয়াড় আশিক, ইমন, শিমুল, রাব্বি, সাকিব, রিদয়, সালমান, জাকারিয়া, দিপন, শোভন, সালফি, সৌরভসহ অন্যান্যরা সাভার এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকাল ৪টায় জাবির মাঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুরু থেকেই আক্রমাত্মক ছিলো জাবি দলের খেলোয়াড় ও দর্শকরা। খেলায় ইবি তিন পয়েন্টে এগিয়ে গেলে উপর্যপুরি ফাউল করতে থাকে জাবির খেলোয়াড়রা।
একপর্যায়ে ইবির খেলোয়াড়রা ফাউল আবেদন করলে তাদের ওপর চড়াও হয় জাবি খেলোয়াড়রা। একই সময় মাঠে ঢুকে পড়ে জাবির দর্শকরা। তারা খেলোয়াড়দের উপর হামলা শুরু করে। এসময় তারা রড, লাঠিসোডা দিয়ে আঘাত করে খেলোয়াড়দের। এদিকে ইবির শিক্ষক কোচ ও কর্মকর্তারা তাদের ঠেকাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে তারা।
হামলার শিকার ইবির সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘খেলায় নূন্যতম নিরাপত্তা ছিল না। তারা আমাদের খেলোয়াড়দের ওপর হামলা করলে আমরা যখন থামাতে যায় তারা আমাদের ওপরও হামলা করে। শিক্ষক পরিচয় দিলেও তারা হামলা থামায় নি।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী। আমার কাছে একটি ভিডিও ফুটেজ আছে। এ ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ইতোমধ্যে আমরা ইউজিসি ও শিক্ষমন্ত্রণালয়ের নিকট বিচার দাবি করছি। সেই সঙ্গে জাবিকে সকল প্রকার খেলাধূলা থেকে কালো তালিকায় রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে হামলার খবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছানোর সাথে সাথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় দুই ঘন্টা খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়া ও জাবিকে সকল প্রকার খেলা থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের অনুরোধে এবং যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি। বুধবার সন্ধ্যায় পৃথক বার্তায় এ নিন্দা, প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ইবি শিক্ষক সমিতি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। একইসাথে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ এসময় ড. কামাল উদ্দিন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হওয়ায় নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানান।
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ইবি হ্যান্ডবল টিমকে বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে। ফলে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রবিবার (৭ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সেমিফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও খেলার পূর্ব মুহূর্তে ইবি টিম দুপুর ৩টায় মাঠে উপস্থিত হয়ে অনুশীলন করেও খেলা প্রত্যাহার করে চলে যায়।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবল দলের অধিনায়ক আশিক অভিযোগ করেন, ‘আমরা যাতে ভালোভাবে খেলতে না পারি সেজন্য তিনবার আমাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়। প্রথমবার এম এইচ হলের দোকানের পাশে। তারপর মাঠে আসলে ১৫-২০ জনের মত আবার আমাদেরকে হুমকি দেয়। পরে একপর্যায়ে দুজন এসে বন্দুক দেখিয়ে বলে মাথার খুলি ওড়িয়ে দিবে। এমন হুমকি দেওয়ার পর আমরা মাঠ ছেড়ে চলে আসি।’