ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
মোঃ সম্রাট আলাউদ্দিন (ধামরাই প্রতিনিধি): ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ধামরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের একমাত্র সবাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানান অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের ইচ্ছায় রোগীদের খাদ্য সরবরাহ সহ নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, প্রয়োজনের তুলনায় কম মাছ, মাংস ও তেল সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান এখানে ভর্তি হওয়া রোগী এবং তাদের স্বজনরা।ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা, তা না করে ঠিকাদারের ইচ্ছেমত অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে খাবার দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, মাথাপিছু একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন পাউরুটি ২৪৪ গ্রাম, চাল ৩৫০ গ্রাম, তেল ৪০ গ্রাম, মুরগী (দেশী) ২৩৩ গ্রাম, মাছ (রুই, কাতল, মৃগেল) ১৬১ গ্রাম, মাছ (গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, আমেরিকান রুই) ১৬১ গ্রাম, সবজি ৩৫০ গ্রাম, পিয়াজ ৫০ গ্রাম, রসুন ২০ গ্রাম, জিরা পাঁচ গ্রাম, আদা পাঁচ গ্রাম, তেজপাতা পাঁচ গ্রাম, এলাচ ১০ গ্রাম, দারুচিনি ১০ গ্রাম ও লবঙ্গ পাঁচ গ্রাম সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীদের সপ্তাহে দুই দিন মাংস ও চারদিন মাছ সরবরাহ করার কথা থাকলেও ৭ দিনে একদিন মাংস সরবরাহ করা হয়। তাও আবার ব্রয়লার মুরগীর মাংস। বাকী দিনগুলোতে রুই,কাতল ও মৃগেল মাছের বদলে দেয়া নলা মাছ। সকালের নাশতায় দেয়া পাউরুটির পরিমাণও কম ।এছাড়া চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিমানের চাল। রোগীরা সাধারণত ওই নিম্নমানের খাবার খেতে চান না। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও নার্সিং সুপারভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা থাকলেও তা করা হয় না।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মেসার্স আবু হানিফ এন্ড ব্রাদার্স এর প্রোপাইটার নুরুল ইসলাম তাঁর ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। এদিকে রোগীদের মাংসের বদলে নলা মাছ ও তেলাপিয়া মাছ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারী নিয়মে মুরগীর মাংসের ও রুই মাছের বিল উত্তোলন করছেন ঠিকাদার বলে জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারের তালিকায় রুই মাছের তালিকা থাকলেও রোগীদের নলা মাছ ও তেলাপিয়া মাছ দেওয়া হয়েছে।
তবে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) জানান, আমি সম্প্রতি এ পদে যোগদান করেছি। দায়িত্ব বুঝে পেলে খাবারের অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
হাসপাতালে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার নুরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তালিকা মোতাবেকই খাবার সরবরাহ করি, তবে একটু ১৯-২০ হতেই পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির মেডিকেল রি-প্রেজেনটেটিভ গণ ডাক্তারদের রুমে ভীড় করে আছেন। এতে করে জরুরী রোগীদের জন্য সময়মত ডাক্তাররা দেখতে পারেন না। কয়েকজন রোগীর স্বজন এমন অভিযোগ করেছেন।
আর রয়েছে বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দালালরা। তারা এখানে এসে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ভুলভাল বুঝিয়ে আরো ভালো ও কমে বিভিন্ন টেস্ট করানোর কথা বলে নিয়ে গিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে।
আরেকটি বিষয় জানা গেছে, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীরাই এখানের ডাক্তারদের প্রেসক্রাইব করা ঔষধ পান না। অভিযোগ রয়েছে, ঔষধ থাকার পরেও সেসব ঔষধ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেয়া হয়না নেই বলে জানা গেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর টি.এস.ও ডাঃ ফজলুল হক জানান, হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সংক্রান্ত দায়িত্ব মূলত আর.এম.ও এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সের। আর আমিও প্রায় সময়ই ইন্সপেকশন করি। খাদ্য সরবরাহে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।