নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে তানজিলা নামে এক নারীকে ১০ টুকরো করে হত্যা ও লাশ গুমের দীর্ঘ ১০ মাস পর ঘটনার মূল হোতা কথিত স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
একই সাথে ডোবা থেকে নারীর হাঁড়গোড়ের ১৯টি অংশবিশেষ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার( ২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম দেওভোগ আদর্শনগর এলাকায় দিনব্যাপী এই উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।
২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ফতুল্লার বাড়ৈভোগ এলাকার একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাত নারীর খন্ডিত মাথা উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় থানা পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়েরের পর কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সদর দফতর থেকে তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখাকে। ক্লুলেস মামলাটির রহস্য উদঘাটনে তদন্ত করতে গিয়ে দীর্ঘ দশ মাস পর প্রযুক্তির সহায়তায় খুনিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পিবিআই।
বুধবার( ২৩ ফেব্রুয়ারি) রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার এনায়েতপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় রাসেল নামে এক যুবককে। তার কাছ থেকে পিবিআই উদ্ধার করে বিশটি মোবাইল ফোন ও পঁচিশটি সীমসহ এক নারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ও বিভিন্ন স্থানে খণ্ডিত লাশ গুমের রহস্য।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রাসেলের স্বীকারোক্তি তুলে ধরে পিবিআই পুলিশ সুপার আরো জানান, একই গ্রামের মেয়ে তানজিলার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক তানজিলার পরিবার মেনে না নেয়ায় রাসেল ২০১৯ সালে মোনালিসা নামের এক মেয়েকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে।
এ খবর জানতে পেরে তানজিলা তার পরিবারের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে এবং একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। পরবর্তীতে রাসেল ও তানজিলার মধ্যে আবারো যোগাযোগ ও সম্পর্ক সৃষ্টি হলে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফতুল্লার আদর্শনগর এলাকায় নোয়াবের বাড়ির ৩য় তলায় একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে।
পরে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয় এবং রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে তানজিলাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে ২০২১ সালের ২৯ মার্চ রাতে বাসায় ফিরে তানজিনাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখে রাসেল তাকে মারধর করে।
এক পর্যায়ে রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে থাকা বটি দিয়ে গলা কেটে তানজিনাকে হত্যা করে। পরে মাথা, হাত ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দশ টুকরো করে কিছু অংশ ফ্রিজে রেখে দেয় এবং কিছু অংশ প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে বাসার ছাদ থেকে ডোবা ও ময়লার স্তুপে ফেলে দেয়। পরে রাসেল ওই বাসা থেকে পালিয়ে প্রথমে জেলার সোনারগাঁ ও পরে রংপুরে নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, আসামি রাসেল এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
তিনি আরো জানান, আসামি রাসেল তানাজিলাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলেও এর কোন প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই হত্যাকাণ্ডে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা পিবিআই তা খতিয়ে দেখছে। এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রেফতারকৃত রাসেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন নিহত তানজিলার পরিবারসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।