ধামরাইয়ে আইন অমান্য করে লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।
মোঃ সম্রাট আলাউদ্দিন (ধামরাই প্রতিনিধি): ঢাকার ধামরাইয়ে আইন অমান্য করে লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এতে ঝুকির মধ্যে পড়েছে এলাকার সাধারণ জনগন। তাই যে কোন সময় ঘটে যেতে পাওে মারাক্ত দুর্ঘটনা। কারণ মানহীন এসব সিলিন্ডার ব্যবহার করছে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মানুষ।এতে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে একই সিলিন্ডার দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই ব্যবসা।উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট বাজার জুড়ে এসব নিম্ন মানের গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান লক্ষ করা গেছে।
ধামরাইয়ের বালিয়া বাজার, উপজেলা সদর,আইঙ্গন মোড়, ইসলামপুরের মোনায়েম খানের বসতবাড়ি, আইঙ্গন ঘনবসতি একটি বাজার সেখানে মুদি দোকানে ও রাস্তার সাইডে খোলা জায়গায় বসে বিক্রি করছে গ্যাস সিলিন্ডার, কালামপুর বাজার, বান্নাখোলা বাজার,কুশুরা বাজার, সূতিপাড়া বাসষ্ট্যান্ড বাজার, শৈলান বাজারসহ প্রায় সব বাজারেই দেখা গেছে খোলামেলা ভাবেই বিক্রি হচ্ছে এসব গ্যাস সিলিন্ডার।
সরকারের আইন অনুযায়ী জনপদ থেকে ১০০ মিটার দূরে বিক্রয় কেন্দ্র করার নিয়ম থাকলেও এসব বাজার গুলোর মাঝ খানেই বসানো হয়েছে সিলন্ডারের দোকান। কোন ধরনের আইন মানছে এসব ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামপুরে মোনায়েমের শোয়ার ঘরের পাশের রোমে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে ব্যবসা করছে। আবার ভিন্নচিত্র দেখা যায়, ডুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশে থ্রি স্টার ও বারবারিয়া মেসার্স সেলিমের নামে চলছে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা।
বারবারিয়া সেলিম ও ডুলিভিটা ষ্ট্যান্ডে শত শত সিলিন্ডার নিয়ে কোন প্রকার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা না করেই চালাচ্ছে এই ব্যবসা। ফায়ার সার্ভিসের কোন অনুমোদন নাই। বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে নানা তালবাহানা করে এবং কোন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা নাই। অপরদিকে, বারবারিয়ার সেলিম ঘর ভাড়া নিয়ে বসতবাড়ির পাশে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা করছে।
সেলিম শুধু বিস্ফোরক দ্রব্যের কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হয়। তবে অগ্নিনির্বাপকের কোন ব্যবস্থা নাই। তাই যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই এই ধরণের ক্ষতির হাত হতে বেচে উঠার কোন পথ নেই। আবার দেখা যায়, ডুলিভিটা ষ্ট্যান্ডে থ্রি স্টার গ্যাস সিলিন্ডার শো- রোমের পাশে সিএনজি গ্যাস পাম্প রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলিন্ডারের মাধ্যমে আবাসিক খাতে গ্যাস ব্যবহারের জন্য বিস্ফোরক অধিদফতরের কয়েকটি নীতিমালা রয়েছে। মহা বিস্ফোরক অধিদফতর কর্তৃক এসব নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং সেলও রয়েছে।
দেশের বেশ কয়েকটি গ্রুপ অব কোম্পানি আবাসিক খাতে ব্যবহারের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার তৈরি এবং বাজারজাত করছে। আর নীতিমালা ভঙ্গ করে এসব সিলিন্ডার এখন যত্রতত্র বিক্রি করা হচ্ছে। বিস্ফোরক অধিদফতর গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় ও বিপণন লাইসেন্স প্রদান করলেও সাব-ডিলারের নামে এসব প্রতিষ্ঠান বাজারে মুদি মালের মতো দোকানে এমনকি শোয়ার ঘরের পাশের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক উপজেলার এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করার কথা থাকলেও অসাধু গুটিকয়েক কর্মকর্তা উৎকোচের বিনিময়ে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়ে উল্টো মদদ প্রদান করছে। বিধি মোতাবেক ১০টির বেশি সিলেন্ডার মজুদ রেখে বিক্রির ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদফতরের সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক।
বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ২০০৪-এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলেন্ডার মজুদ করা যাবে।
তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী এসব সিলিন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং আগুন নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাস স্থাপনা প্রাঙ্গণে দিয়াশলাই বা আগুন লাগতে পারে এমন কোনো বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না। মজুদ করা স্থানের কাছাকাছি আলো বা তাপের উৎস থাকা যাবে না।
এলাকাবাসি বলেন, এসব সিলিন্ডার যেকোন সময় ফেটে গেলে মানুষের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এদের বৈধ কোন কাগজপত্র আছে কি না জানি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যাবসায়ী বলেন, থ্রি ষ্টার গ্যাস সিলিন্ডার শো- রোমের পূর্ব পাশে একটি সিএনজি স্টেশন ও আশ – পাশের চারদিকে অনেক দোকান রয়েছে। বিপদ ঘটলে বাচার কোন উপায় নেই। কারন,তাদের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের কোন ব্যবস্থা নেই।
সেলিম ট্রেডার্স ও থ্রি ষ্টার শো-রুমে চার থেকে পাঁচটি করে বোতল ভর্তি সিলিন্ডার একটির উপর আরেকটি রাখা হয়েছে। এতে যেকোন সময়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব ব্যবসায়ীরা আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যবসা করছে। বর্তমানে চা-দোকান থেকে আরম্ভ করে ভ্যারাইটিজ স্টোরেও পাওয়া যায় এ সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল।
ফ্যায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. শামিম হোসেন বলেন, পূর্বে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা ফায়ার স্টেশনের আওতা ভূক্ত ছিল না। এখন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা ফায়ার স্টেশনের আওতা ভূক্ত হয়েছে। অনেকে আমাদের কাছ থেকে বৈধতার লাইসেন্স নিয়েছে।আর যারা এখনো নেয়নি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।