বেসরকারি খাতেও পেনশন চালুর পরিকল্পনা সরকারের, জানালেন তথ্যমন্ত্রী ।
মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ সিনিয়র তথ্য অফিসার ঃ সরকারি খাতের মতো বেসরকারি খাতেও পেনশন চালু করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে দি সিনিয়র সিটিজেন সোসাইটির সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে সর্বক্ষেত্রে পেনশন চালু করা। এখন তো শুধু সরকারি ক্ষেত্রে পেনশন চালু আছে। সব ক্ষেত্রে পেনশন চালু নেই। কিন্তু ইউরোপের যে দেশগুলো সামাজিক কল্যাণমূলক দেশ, সেখানে সব ক্ষেত্রে পেনশন চালু আছে। বেসরকারি উদ্যোক্তাকেও তার কর্মীর জন্য টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ সব মানুষ পেনশন স্কীমের আওতায়।
৬৫ বছরের বেশী নাগরিকরা যাতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পান সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স যেদিন ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে, তিনি বললেন, আমার এখন ৬০ বছর, আমি বুড়ো হয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশের দুস্থ প্রবীণ নাগরিকদের কথা মাথায় রেখেই বয়স্ক ভাতা চালু করেছেন। প্রতিবছর বয়স্ক ভাতার পরিধি ও পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা হচ্ছে, বাংলাদেশ একটি সামাজিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হবে, মানবিক রাষ্ট্র হবে। আমরা বাংলাদেশ উন্নত করার পাশাপাশি একটি সামাজিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। উন্নত দেশ গঠন করা আর কল্যাণমুখী মানবিক রাষ্ট্র গঠন করার মধ্যে ভিন্নতা আছে।
গত সংসদে মা-বাবার ভরণপোষণ সম্পর্কে আইনে পাশ হয়েছে। কোন সন্তান যদি বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন না করেন, তাহলে সেই আইন অনুযায়ী বাবা-মা এখন আদালতে যেতে পারেন এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনে মামলাও হচ্ছে। এই আইনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার করেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে ক্রমাগতভাবে গড় আয়ু বাড়ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের গড় আয়ু ছিল ৩৯ বছর। এখন সেটি ৭৩ বছর। ভারতে গড় আয়ু ৭১ বছর, পাকিস্তানে ৬৮ কিংবা ৮৯ বছর। পৃথিবীতে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌছার কারণে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে গড় আয়ু বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী শতাব্দি নাগাদ পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু শতক ছাড়িয়ে যাবে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রবীণ নাগরিকদের দেখভাল করা এবং সামগ্রিক পরিকল্পনায় এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়ে ২০ থেকে ২২ লক্ষ। অর্থ্যাৎ প্রতি পাঁচ বছরে এক কোটি মানুষ বাড়ে। আমাদের দেশের লোকসংখ্যা যখন ২২-২৫ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে তখন এরপর আর জনসংখ্যা বাড়বে না। তখন কিন্তু প্রবীণ নাগরিক বাড়বে। এই প্রেক্ষাপটে ভিশন ২০২১ এর পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আজকে নানা ক্ষেত্রে সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে। ছোটবেলায় আমরা গুণীজন ও বাবা-মাকে সম্মান করার যে শিক্ষাগুলো পেয়েছি, এখনকার প্রজন্মের কাছে সেটা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী একটা অবক্ষয় হয়েছে। আমাদের দেশও সেই অবক্ষয় থেকে মুক্ত থাকেনি। এ অবস্থায় স্কুলে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে গুরুজনদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য কী সেটা শেখানো হবে। পারিবারিকভাবে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, পরিবারের গুরুজন বৃদ্ধ হয়ে গেলে সেই শিক্ষা দিলে হবে না। সন্তানের বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে তাকে শিক্ষা দিতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে সবসময় বলি, আজকে তোমার বাবা-মা তোমাকে আদর-যত্ন করে বড় করছে। তুমি যখন তরুণ-তরুণী বা যুবক-যুবতী হবে তখন তোমার বাবা-মা তোমার সন্তানের মতো। তোমাদেরকে আজকে যে স্নেহে লালন-পালন করছে, তারা যখন বয়স্ক হয়ে যাবে তখন একই স্নেহে লালন-পালন করবে। এই শিক্ষাটা যদি এখন থেকে পরিবারে দেয়া না হয়, স্কুলে দেয়া না হয় তাহলে তাকে তো পরে সেভাবে বুঝানো যাবে না।
এসব বিষয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিনিয়র সিটিজেন সোসাইটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সেমিনার আয়োজন করতে পারে বলেও মত দেন তথ্যমন্ত্রী।
দি সিনিয়র সিটিজেন সোসাইটির সভাপতি ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।