সাভারে ওটি বয় যখন হাসপাতালের মালিক, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু
বিপ্লব ,সাভার:সাভার একটি বেসরকারী হাসপাতালে মালিকের গাফিলতিতে ভূল চিকিৎসায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
এঘটনায় এতিম মা হারিয়েছে তিন আগে জন্ম নেয়া নিহতের পুত্র সন্তাটি। বৃহস্পতিবার রাতে পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লায় অবস্থিত ইসলামিয়া ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হসপিটালে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নিহতের নাম হাজেরা বেগম (৪৫)। সে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের কোন্ডা এলাকার মোঃ মাসুদের স্ত্রী।
রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন, গত তিন দিন আগে ওই হাসাপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হাজেরা বেগম একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। এরপর থেকেই তার রক্ত বন্ধ না হওয়ায় দিন দিন হাজেরার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছিলো। এঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রক্ত দেয়ার পরামর্শ দিলে স্বজনরা রক্তের জন্য খোজাখুজি করতে থাকেন।
এর ভিতরেই হাসপাতালের মালিক জশিম জানায় তাদের কাছেই রক্ত আছে এবং রোগীকে দেয়া যাবে। পরে হাসপাতালের দেয়া রক্তই কাল হয়ে যায় হাজেরার জন্য।
রিপন নামে হাজেরা এক আত্মীয় বলেন, কোন ধরনের পরিক্ষা ছাড়াই রক্ত দেয়ার সাথে সাথে রোগীর খিচুনি শুরু হয়। এসময় আমরা অন্য হাসাপাতালে স্থানান্তর করতে চাইলেও হাসপাতাল মালিক জশিম তা না করে আরও এক ব্যাগ রক্ত দিতে বলে। দুই ব্যাগ রক্ত দেয়ার সময় অচেতন হয়ে যায় হাজেরা। এসময় হাসপাতাল মালিক জশিমসহ রোগীর স্বজনেরা হাজেরাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃতু ঘোষনা করেন। এঘটনার পরপরই জশিম হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়, তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। তবে সোহেল নামে একজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মালিকের সাথে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার আশ^াস দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের লোকজন এখন শোকে দিশেহারা। শিঘ্রই এঘটনায় আমরা হাসপাতাল মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করবো।
এব্যাপারে হাসপাতালের মালিক মোঃ জশিম হাওলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। লোকমারফত খোজ নিয়ে তাকে চেনা গেলেও সে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, ইসলামিয়া ডিজিটাল ল্যাব ও হসপিটালের মালিক জশিম হাওলাদার কিছুদিন আগেও একই ভবনে থাকা রোজ ক্লিনিকের ওটি বয় হিসেবে কাজ করতো। এর আগে সে পাশর্^বর্তী ল্যাব জোন হাসপাতালে চিকিৎসকের ভিজিটর হিসেবে কাজ করেছে। মুলত চতুর জশিম অল্প দিনেই হাসপাতাল দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করে একাধিক অপরাধ করেও সুকৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্যান্য হাসপাতালের মালিকগন। কারন একজনের অন্যায়ের জন্য সকলের সুনাম এবং সেবাদানে বিঘ্ন ঘটুক তা কেউই চায়না।
সাংবাদিক পরিচয় দানকারী সোহেল বলেন, যখনই রোগীর অবস্থা খারাপ হলো তখন রোগীর স্বজনরা অন্য হাসপাতালে নিতে চান। কিন্তু হাসপাতালের মালিক জশিম তাকে নিতে দেয়নি। যে কারনে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং মারা যায়। জশিম এর আগেও এরকম কাজ করেছে। সে আসলে কোন চিকিৎসক না হয়েও হাসপাতালের মালিক হয়ে গায়ের জোরে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সায়েমুল হুদা বলেন, যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কিংবা ভূল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে পরিবারের পক্ষ থেকে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ পাওয়া গেলে পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।