সাভারে নারী পাচার চক্রের ২ সদস্য আটক..

Loading

 রফিকুল ইসলাম জিলু, সাভার:ভারতে নারী পাচার চক্রের তিন সদস্যেকে আটক করেছে পুলিশ।

 শনিবার দুপুরে তাদের জামসিং এলাকা থেকে আটক করেছে। মামলার বাদী সাভার থানার জামসিং এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে নুর হোসেন (৭১)। আসামীরা হচ্ছেন একই এলাকার মো: আজিজ, নিলু বেগম ও তার স্বামী মোতালেব মিয়া।

পুলিশ নিলু বেগম ও তার স্বামী মোতালেব মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। ভারতে অবস্থানরত আসামীদের মেয়ে স্বপ্নার মাধ্যমেই তারা স্থানীয় মেয়েদের ফুসলিয়ে ভারতে পাচার কাজ চালাতো।বলে জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আলমগীর জানান, আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে। জানা যায়, কানাডার নাম করে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাদী নুর হোসেনের মেয়ে জায়েদা আক্তারকে ভারতে পাচার করেছে আসামীরা। তাদের বিরুদ্ধে ৭/১০-২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধে ও দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলা নং ৪৩/১৫৪

মামলার এজহারে জানা যায়, আসামীরা যোগসাজেশ করে বিগত ২১/১২/২০২০ ইং তারিখে বাদী নুর হোসেনের মেয়ে জায়েদ আক্তার ও তার বোন তাসলিমাকে কানাডা পাঠানোর নাম করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয় এবং অবৈধ পথে ভারতে পাচার করে। কিন্তু অসুস্থতার ভান করে কৌশলে তাসলিমা পালিয়ে আসলেও ঘটনার কয়েকদিন পর জায়েদ জানায় তাকে ভারতের কলকাতায় আটকে রাখা হয়েছে। সে খুব সমস্যায় আছে ।

এ বিষয় আসামীদের জানালে আসামীরা জানায় মেয়েকে ফেরত পেতে হলে আরো ১ লাখ ২০ হাজহার লাগবে। বাদী জানায় বিগত ২৮/১২/২০২০ ইং তারিখে আসামীরা আরো ১ লাখ ২০ হাজার নিলেও মেয়েকে আর ফেরত দেয় নি। এর পর বিদেশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে বাদীর ফোনে খবর আছে যে তার মেয়ে জায়েদা জেলে আছে। ছাড়াতে আরো টাকা লাগবে। বাদী আর টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তারা বলে টাকা না দিলে তোর মেয়েকে বিক্রির করে দিবো।

এ ছাড়াও আসামীরা হুমকি প্রদান করে যে বিষয়টি প্রশাসন বা পুলিশকে জানালে তাকে বাড়ী ঘর থেকে উচ্ছেদ করে এলাকা ছাড়া করবে। এ বিষয় বাদী গত ৮ ফেব্রæয়ারী সাভার মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে কিন্তু মামলার তদন্তকারী প্রথম কর্মকর্তা মামলাটি সঠিক ভাবে তদন্ত করতে না পারায় ঢাকা জেলা পুলিশের ডিআইজি অফিসের নির্দেশে পরে মামলাটির তদন্ত দেওয়া হয় সাভার মডেল থানার এস আই আলমগীরের নিকট। তবে এস আই আলমগীর এই প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাদের আটক করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান আছে। তিনি বলেন, মামলার তৃতীয় আসামী আজিজ পলাতক থাকায় তাকে আটক করা সম্ভব হয় নি।

তবে এলাকাবাসী জানান, নিলুর ও তার স্বামী মোতালেব স্থানীয় তিন নং আসামী আজিজের মাধ্যমে ভারতে নারী পাচারের সাথে জড়িত । নিলুর মেয়ে স্বপ্না বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। ২ বছর ধরে সেখানে অবস্থান করা স্বপ্নাকে দেখিয়েই মুলত: নারী পাচারের ফাঁদ বানানো হয়েছে। জায়েদা ভারতে যাওয়ার পর স্বপ্নার সাথে তোলা ছবিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ছবিতে অন্যদেশের আরো একটি মেয়ের সাথে জায়েদা ও স্বপ্নাকে দেখা গেছে। বিদেশে পাচারের আগে একই গ্রামের হওয়ার সুবাদে স্বপ্ন্া জায়েদার সাথে ফোনে আলাপ করে জানায় সে কানাডায় আছে তাকেও নিয়ে আসবে। পরে ভারতে পাচার হওয়ার পর সে জানায় আমি কানাডা না কেরালার কথা বলে ছিলাম। জায়েদার সাথে তার বোন তাসলিমাকেও ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কলকাতায় পুজা সরকার নামে তার ভারতীয় আইডিকার্ড বানানোর সময় সে অসুস্থতার কথা বলে কৌশলে পালিয়ে আসে। দালালরা বর্ডারের তার কেটে তাদের দুই বোনকে ওপার নিয়ে যায় বলে জানায় তাসলিমা। আবার একই কায়দায় টাকা দিয়ে তারের বেড়া কেটে সে দেশে ফিরে আসে। তবে জানা যায় জায়েদা কেরালা থেকে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরলে তাকে কেরালা জেলে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এ এস আই এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন তিনি ভারতে জায়েদার দালালের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন জায়েদা ভারতে আছে। তবে জায়েদার বাবা নুর হোসেন জানান, দুই মাস ধরে জায়েদার কোন ফোন বা খোঁজ তিনি পাচ্ছেন না। তার ধারনা আরো টাকা না পেয়ে ভারতীয় দালালরা স্থানীয় আসামীদের সাথে যোগ সাজেশে করে তাকে হত্যা করে থাকতে পারে।

নুর হোসেন জানান, মামলা করার পর থেকে আসামীরা তাকে দেশ ছাড়া করার হুমকি সহ জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তিনি দ্রুত তার পাচার হওয়া মেয়ের সন্ধানসহ পরিবারের নিরাপত্তা দাবী করেন।